আমি থামাতে গিয়েও মার খেয়েছি। শেষে আমার স্বামী লোহার পাইপ নিয়ে ছেলের গায়ে কয়েকটা বাড়ি দেয়

screenshot 2025 07 30 124036

বরিশালের বাকেরগঞ্জের ভরপাশা গ্রামে মঙ্গলবার দুপুরে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। মাদকাসক্ত একমাত্র ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করলেন মা-বাবা। ২০ বছর বয়সী হাসান গাজী ছিলেন জাফর গাজী এবং নাজমা বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে। দুই বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় একমাত্র ছেলে হাসানই ছিলো এই পরিবারের শেষ আশা। কিন্তু মাদকের নেশা ধীরে ধীরে তার জীবনটাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল।

প্রতিবেশীদের ভাষ্যে, দীর্ঘদিন ধরে নেশার টাকা না পেলে বাড়িতে ভাঙচুর করত হাসান। নিজের মা-বাবাকেও মারধর করতে কুণ্ঠাবোধ করতো না। ঘটনার দিন দুপুরে আবারও সে পাঁচ হাজার টাকার জন্য ঘরে ভাঙচুর শুরু করে। বাবা জাফর গাজী বাঁধা দিলে তাকে মারধর শুরু করে হাসান। ছেলেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন মা নাজমা বেগম, কিন্তু তাকেও মারধর করে হাসান।

এমন অবস্থায় অসহায় মা ছেলের হাত চেপে ধরেন, আর বাবা লোহার পাইপ দিয়ে কয়েকটি আঘাত করেন। মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে হাসান। নিথর দেহ দেখে হতভম্ব হয়ে যান তারা। একসময় বুঝতে পারেন, তাদের প্রিয় ছেলে আর নেই। চোখের জল মুছেই জাফর গাজী ও নাজমা বেগম থানায় গিয়ে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন।

ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, বিকেল চারটার দিকে দম্পতি থানায় এসে নিজেই বলেন—”আমরা ছেলেকে মেরে ফেলেছি।” পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। ঘটনাটি পারিবারিক কলহের হলেও এটি একটি হত্যাকাণ্ড—তাই মামলা প্রক্রিয়াধীন।

স্থানীয়দের ভাষ্যে, হাসানকে সবাই ভালোবাসত। কিন্তু মাদকের নেশা ধীরে ধীরে তাকে অমানুষে পরিণত করে। নেশার টাকার জন্য নিজের মা-বাবাকে মারধর করা প্রতিদিনের ঘটনা ছিল। চাচি কহিনুর বেগম বলেন, “আমি বারবার থামানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু মা-বাবার সেই কান্না, অসহায়তা দেখে বোঝা যাচ্ছিল তারা কতটা অসহায় ছিল।”

ক মায়ের কোলের একমাত্র সন্তান আজ মাটির নিচে, আর বাবা-মা কারাগারে। মাদক নামক অভিশাপ কেড়ে নিয়েছে একটি পরিবারকে। আমরা সবাই মিলে যদি এখনই এই সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে না দাঁড়াই, কাল হয়তো আরও কত বাবা-মা তাদের সন্তানকে হারাবে!

এই ঘটনায় গ্রামজুড়ে নেমেছে শোকের ছায়া। মানুষ বলছে, “মাদক শুধু একটা পরিবার নয়, পুরো সমাজকে ধ্বংস করছে।”

মায়ের কোলের একমাত্র সন্তান আজ মাটির নিচে, আর বাবা-মা কারাগারে। মাদক নামক অভিশাপ কেড়ে নিয়েছে একটি পরিবারকে। আমরা সবাই মিলে যদি এখনই এই সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে না দাঁড়াই, কাল হয়তো আরও কত বাবা-মা তাদের সন্তানকে হারাবে!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *