শুক্রবার, ১৫ আগস্ট ২০২৫

২০১৬ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করে মোবাইল ফোনে আড়ি পাতার সরঞ্জাম কিনেছিলো আওয়ামী লীগ সরকার। বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ—এই নজরদারি প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে মূলত বিরোধী মত দমন, গুম-খুনসহ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, যা মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করেছে।
সরকারি কেনাকাটায় নজরদারি প্রযুক্তি
নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ও অবস্থান শনাক্ত করতে বিগত সরকার কিনে আইএমএসআই ক্যাচার, আইএলআইএস, জিপিএস ট্র্যাকার, স্যাটেলাইট যোগাযোগ বিশ্লেষণ যন্ত্র, কথোপকথন শনাক্ত প্রযুক্তি এবং ‘ম্যান-ইন-দ্য-মিডল’ টুলসহ উন্নত সরঞ্জাম। এ প্রক্রিয়ায় পুলিশ, র্যাব ও ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশনস মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) যৌথভাবে যুক্ত ছিলো।
সরকারি ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এসব যন্ত্র দেশের নিরাপত্তা, সন্ত্রাস দমন এবং বৈদেশিক হুমকি মোকাবেলায় কেনা হয়। তবে সমালোচকদের দাবি, প্রকৃত উদ্দেশ্যের বাইরে গিয়ে প্রযুক্তির অপব্যবহার করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা বলেন,
“যেকোনো নাম্বার নজরদারিতে আনার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কারণ ও জবাবদিহিতা থাকতে হবে। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ফায়দার জন্য প্রযুক্তির অপব্যবহার করা উচিত নয়।”
তিনি আরও বলেন, গুম-খুনের ঘটনায় এনটিএমসি দায়ভার এড়াতে পারবে না। এসব ঘটনার তদন্ত হলে প্রকৃত চিত্র স্পষ্ট হবে।
সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক জানান,
“রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহার নিরাপত্তা নিশ্চিত তো করেইনি, বরং মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করেছে। এই ভুলের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হবে।”
রাজনৈতিক সুবিধা ও মানবাধিকার হুমকি
অভিযোগ আছে, নজরদারি সরঞ্জাম ক্রয়ে টেন্ডারের নামে রাজনৈতিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য কেনা যন্ত্রের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত না হলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, এসব প্রযুক্তি ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও স্বাধীন তদারকি জরুরি, যাতে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার না হয় এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার হাতিয়ার না হয়।