কলকাতায় ‘গোপন অফিস’ খুলেছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা : নির্বাসনে থেকেও সক্রিয়

📅 তারিখ: ২০২৫-০৮-০৮
🧷 রিপোর্ট: বাংলা নিউজ স্টেশন ডেস্ক

hasina kolkata awame league office, bangla news station

কলকাতার ব্যস্ততম এক উপনগরীর বাণিজ্যিক ভবনের অষ্টম তলায় চলছে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ‘গোপন পার্টি অফিস’। সেখানে না আছে কোনো সাইনবোর্ড, না কোনো রাজনৈতিক প্রতীক বা নেতার ছবি। অথচ এটাই এখন দলটির ভার্চুয়াল নেতৃত্ব ও পরিকল্পনার কেন্দ্রস্থল।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশে ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রায় দেড় দশকের শাসন। এরপর দলটির শীর্ষ ও মধ্যম পর্যায়ের বহু নেতা আশ্রয় নেন প্রতিবেশী দেশ ভারতে। কলকাতার আশপাশে ভাড়া করা বাসা ও ফ্ল্যাটে তাঁরা এখনো অবস্থান করছেন।

গোপন অফিসের বাস্তব চিত্র

বিবিসি বাংলার এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, কলকাতার লাগোয়া একটি উপনগরীর একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে ৫০০–৬০০ স্কয়ার ফুট আয়তনের একটি ফ্ল্যাটেই তৈরি করা হয়েছে এই অফিস। এটি বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে এখানে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম চলছে। সেখানকার চেয়ারে বসা হয়, পুরোনো টেবিলে রাখা হয় দলীয় আলাপচারিতা। কোনো ব্যানার, ছবি, বা পোস্টার নেই—সবই গোপনীয়তার স্বার্থে।

একজন পলাতক নেতা বলেন, “এটি আসলে একটি বাণিজ্যিক অফিস। আগের অফিসের জিনিসপত্রই ব্যবহার করছি।”

ছোট মিটিং হয় এই অফিসে, যেখানে একসঙ্গে ৩০–৩৫ জন বসতে পারেন। বড় বৈঠকের জন্য রেস্টুরেন্ট বা ব্যাঙ্কোয়েট হল ভাড়া নেওয়া হয়।

ভারতে অবস্থানরত নেতাদের সংখ্যা

দলীয় সূত্র মতে, বর্তমানে প্রায় ৮০ জন বর্তমান এবং প্রাক্তন সংসদ সদস্য, বিভিন্ন জেলার সভাপতি-সম্পাদক, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং মেয়র শ্রেণির নেতা কলকাতা ও আশপাশে বসবাস করছেন। কেউ পরিবারের সাথে, কেউ আবার ২–৩ জন মিলে শেয়ার করে বাসায় থাকছেন। কিছু নেতা ইতোমধ্যে কানাডা, আমেরিকা বা অস্ট্রেলিয়ায় চলে গেছেন।

তাদের মধ্যে বেশিরভাগ নেতাই নিয়মিত আসেন এই গোপন পার্টি অফিসে, যদিও এর কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি নেই।

ভার্চুয়াল নেতৃত্ব ও দলীয় পরিচালনা

আওয়ামী লীগের মূল কর্মকাণ্ড এখন ভার্চুয়ালি পরিচালিত হচ্ছে। হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম ও লাইভ ভিডিওর মাধ্যমে বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংযুক্ত থাকেন তারা। দলের শীর্ষ নেত্রী শেখ হাসিনাও মাঝে মাঝে এসব লাইভ আলোচনায় যোগ দেন।

গত ৩১ জুলাই দিল্লিতে এক গোপন বৈঠকে অংশ নেন কয়েকজন শীর্ষ নেতা, যা বিবিসি বাংলা নিশ্চিত করেছে। যদিও বৈঠকের স্থান ও বিষয়বস্তু গোপন রাখা হয়েছে।

ছাত্রলীগের সভাপতিও কলকাতায়

নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি সাদ্দাম হোসেন গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, “ক্যাম্পাস খুব মিস করি। হাজার হাজার কর্মী এখনো বাংলাদেশে থেকে ক্লাস করতে পারছেন না, পরীক্ষা দিতে পারছেন না, শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে।”

তার দাবি, এমনকি এইচএসসি পরীক্ষাও বহু ছাত্র-ছাত্রী দিতে পারেনি, শুধুমাত্র তারা আওয়ামী লীগ ঘরানার পরিবারের সন্তান বলে।

অর্থায়ন ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন

নেতাদের জীবনযাত্রায় এসেছে বড় পরিবর্তন। বিলাসবহুল জীবনের বদলে এখন অনেকে গণপরিবহন ব্যবহার করছেন, বাসা শেয়ার করে থাকছেন। খরচ চালাতে সহায়তা করছেন দেশ-বিদেশে থাকা শুভাকাঙ্ক্ষীরা ও পরিবার।

প্রাক্তন সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, “আমরা এখন বাসে, ট্রেনে যাতায়াত করি। কয়েকজন মিলে এক বাসায় থাকি। সঞ্চয়ের মাধ্যমে যতটা সম্ভব স্বল্প খরচে চলার চেষ্টা করছি।”

ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও আন্তর্জাতিক নজর

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া এই অফিস চালু রাখা সম্ভব হতো না। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলিও এ বিষয়ে অবগত।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও দলের অবস্থান

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “বর্তমান সরকার সবদিকেই ব্যর্থ। অথচ তারা শেখ হাসিনা ও ভারতের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। মানুষ এখন বলছে—হাসিনার সময়ই ভালো ছিলাম।”

তিনি বলেন, “আমরা এখনও লড়াই করছি। দিনক্ষণ ঠিক করে এই রাজনৈতিক লড়াই চলে না। তবে লড়াই ছাড়া উপায়ও নেই।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *