আজ ৫ আগস্ট, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস। গত এক বছরে আমরা অনেক সংকট ও সম্ভাবনা মোকাবিলা করে একটি নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপন করেছি। অর্থনৈতিক অগ্রগতি, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, এবং ন্যায়বিচারের পথে আমরা অনেকটা এগিয়েছি। এখন আমাদের সামনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়— একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব সফলভাবে সম্পন্ন করব, ইনশাআল্লাহ।
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম। প্রিয় দেশবাসী, শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, ছাত্র-ছাত্রী, বয়স্ক, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সবাইকে আমার সালাম জানাচ্ছি। আসসালামু আলাইকুম।
আজ ৫ আগস্ট, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস। বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় দিন। এক বছর আগে এই দিনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পূর্ণতা পায় এবং দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্ত হয় আমাদের প্রিয় স্বদেশ।
গত বছরের জুনে সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের রায়কে কেন্দ্র করে তরুণ শিক্ষার্থী সমাজ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। স্বৈরাচারী শাসকের দমন-পীড়ন, নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও নির্মম হত্যাকাণ্ডের কারণে তাদের এই ক্ষোভ দাবানলে পরিণত হয়। সেই দুঃসময়ে এদেশের ছাত্র-শ্রমিক-জনতা, বিশেষ করে আমাদের অদম্য নারীরা, নির্ভীকচিত্তে দাঁড়িয়েছিলেন এবং দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
আজকের এই দিনে আমি জাতির সূর্যসন্তান জুলাই শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। জুলাইয়ে যারা আহত হয়েছেন, চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন বা দৃষ্টি হারিয়েছেন, জাতির পক্ষ থেকে আমি তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
সংকট থেকে উত্তরণ: এক বছরের অর্জন
প্রিয় দেশবাসী, গত এক বছরে আমরা অনেক সংকট ও সম্ভাবনার মধ্য দিয়ে সময় পার করেছি। সর্বশেষ মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আমাদের কোমলমতি শিশুসহ বেশ কিছু মানুষের প্রাণহানি আমাদের সবাইকে শোকস্তব্ধ করে দিয়েছে। আমি নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং যারা এখনো চিকিৎসাধীন, তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর সিঙ্গাপুর, চীন, ভারত-সহ কয়েকটি দেশের চিকিৎসক ও নার্সরা আহতদের সেবায় যে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। যারা রক্ত দিয়ে আহতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের প্রতিও আমার কৃতজ্ঞতা।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর আমরা অনেক দূর পথ অতিক্রম করে এসেছি। আমাদের জাতীয় জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে এবং অর্থনীতিতে গতিশীলতা এসেছে। মাত্র কয়েকদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনা সফলভাবে সমাপ্ত হওয়ায় আমাদের অর্থনীতির সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়েছে।
এক বছর আগে যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৬ বছরের ধ্বংসযজ্ঞ ও লুটপাটে বিধ্বস্ত অর্থনীতির দায়িত্ব নিয়েছিল, তখন অনেকেই এর ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু মাত্র এক বছরেই আমরা অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পেরেছি। এখন দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাওয়ার পালা। আমরা একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেওয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছি।
জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ
আমি দায়িত্ব গ্রহণের চার মাসের মাথায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করব। তবে তার আগে আমাদের কয়েকটি অত্যাবশ্যকীয় কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ।
আজ, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসে, সকল রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে আমরা জাতির কাছে জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করেছি। এই ঘোষণাপত্রে মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের মানুষের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর আমাদের তিনটি দায়িত্ব ছিল: সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অন্যতম প্রধান দাবি ছিল রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার। সেই লক্ষ্যে আমরা বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছিলাম। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে স্বল্পমেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য অনেক সংস্কার ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, যা অর্থনৈতিক খাত, বিচার ব্যবস্থা ও জনপ্রশাসনে গতিশীলতা আনবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করবে।
দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের জন্য আমরা জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন গঠন করেছিলাম, যেখানে ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল ও জোট স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। দীর্ঘ আলোচনার পর ১৯টি মৌলিক সংস্কারের বিষয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে।
সংস্কারের ক্ষেত্রে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি। ঐকমত্য কমিশনের পরিচালনায় দেশের সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত হওয়ার পথে। এটি একটি ঐতিহাসিক অর্জন যা সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর, জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা ও সক্ষমতা এবং নাগরিক অধিকারের সত্যিকারের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। আমি এই দলিল প্রণয়নের জন্য সকল রাজনৈতিক দল ও ঐক্যমত্য কমিশনের সদস্যদের, বিশেষ করে প্রফেসর আলী রীয়াজকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বিচার ও আইনের শাসন
জুলাই আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার বিচারকাজ দৃঢ়ভাবে এগিয়ে চলেছে এবং আনুষ্ঠানিক শুনানি পর্বও শুরু হয়েছে। ইতিহাসের নির্মম হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের বিচার এই দেশের মাটিতে হবেই। বিচার প্রক্রিয়াটি দেশবাসীর কাছে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও দৃশ্যমান রাখা হচ্ছে।
অতীতের কোনো সরকারই যেন আর ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে আমাদের রাষ্ট্রকে এমনভাবে মেরামত করতে হবে, যাতে ফ্যাসিবাদের কোনো লক্ষণ দেখা গেলেই তা তাৎক্ষণিকভাবে নির্মূল করা যায়।
নির্বাচনের প্রস্তুতি ও আহ্বান
এবার আমাদের সর্বশেষ দায়িত্ব পালনের পালা: নির্বাচন অনুষ্ঠান। আজ এই মহান দিবসে আপনাদের সামনে বক্তব্য রাখার পর থেকেই আমরা একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করব। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠাব, যাতে আগামী রমজানের আগে, অর্থাৎ ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আমরা চাই, এই নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর হোক। এটি যেন আনন্দ, শান্তি-শৃঙ্খলা ও ভোটার উপস্থিতির দিক থেকে দেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকে।
নির্বাচনে প্রবাসী ভোটারদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ঐতিহাসিক অবদানের কারণে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়েছে। তাই তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য।
এছাড়াও, নারী ভোটাররা যেন নির্দ্বিধায়, আনন্দ-উৎসাহ সহকারে ভোট দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নেব। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ভোট দিতে না পারা নাগরিকরা যেন এবারের নির্বাচনে তাদের বকেয়া আনন্দসহ মহা আনন্দে ভোট দিতে পারেন। আমরা চাই, নির্বাচনের দিনটি যেন ঈদের উৎসবের মতো হয়, যেখানে সবাই বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন।
দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে একটি গোষ্ঠী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে তারা কোনোভাবেই নির্বাচনকে সংঘাতময় করে তোলার সুযোগ না পায়। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সফলভাবে আয়োজন করা গেলে এই অপশক্তির পরাজয় চূড়ান্ত হবে।
নির্বাচন সংক্রান্ত পরামর্শ ও মতামত জানতে আমরা একটি অ্যাপ তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছি। এই অ্যাপের মাধ্যমে আপনারা আপনাদের সকল পরামর্শ, আশঙ্কা এবং উদ্যোগের কথা আমাদের জানাতে পারবেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আমার আহ্বান, আপনাদের নির্বাচনী ইশতেহারে তরুণ ও নারীদের যেন বাদ না দেওয়া হয়। কারণ এই তরুণ-তরুণীরাই দেশকে বদলে দিয়েছে এবং বিশ্বকে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও নতুন দিকনির্দেশনা
গত এক বছরে আমরা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছি। বন্যার কারণে মূল্যস্ফীতি প্রায় ১৪ শতাংশে পৌঁছেছিল, যা এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে। আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে এটি ৬ শতাংশে নেমে আসবে।
প্রবাসীদের অসীম আস্থার ফলে মুদ্রা বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। গত অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেকর্ড তিন হাজার ৩৩ কোটি ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে এবং রপ্তানি আয় প্রায় ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে টাকার মান শক্তিশালী হয়েছে।
আমাদের অন্যতম বড় লক্ষ্য হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি। সম্প্রতি হংকংভিত্তিক শিল্প গোষ্ঠী হানডা বাংলাদেশের বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতে আড়াইশ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
অর্থপাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগও আমরা নিয়েছি। ইতোমধ্যে কিছু সম্পদ জব্দ হয়েছে এবং আমরা আশা করি, এই প্রক্রিয়া সফলভাবে চালিয়ে গেলে আরো ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাবে।
দেশের নদী ও বিশাল সমুদ্র আমাদের মূল্যবান সম্পদ। আমরা এই সম্পদকে কাজে লাগিয়ে একটি সমান্তরাল ‘পানিভিত্তিক অর্থনীতি’ গড়ে তুলতে চাই। আমাদের অংশের বঙ্গোপসাগরকে দেশের মূল্যবান অংশ হিসেবে বিবেচনা করে আমরা বাণিজ্য, মৎস্য আহরণ, গ্যাস অনুসন্ধানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করব। চট্টগ্রাম বন্দরকে আধুনিক করে গড়ে তোলা গেলে তা শুধু বাংলাদেশের অর্থনীতিতেই নয়, নেপাল ও ভূটানসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
শিক্ষা ও প্রবাসীদের কল্যাণ
আমরা আর কখনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমন কোনো রাজনীতি দ্বারা কলুষিত হতে দেব না যা পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট করে। আবাসিক হলগুলোতে আর কোনো দলীয় সন্ত্রাস বা নির্যাতন চলবে না। শিক্ষকদের একটি বড় অংশ প্রমোশনের জন্য দলীয় রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। বর্তমান সরকার শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে ধারাবাহিক বৈঠক করছে এবং বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে।
সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড এক ধাপ বাড়িয়ে দশম গ্রেড করা হয়েছে এবং শূন্য পদে সাড়ে ছয় হাজার প্রধান শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিক করতে সব স্কুলে ইন্টারনেট সংযোগ ও মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আরব আমিরাত পুনরায় ভিসা চালু করেছে এবং মালয়েশিয়া মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা চালু করেছে। আগামী পাঁচ বছরে জাপানে অন্তত ১ লক্ষ বাংলাদেশি তরুণকে পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সৌদি আরব, জর্ডান, ওমানসহ বিভিন্ন দেশে অনিয়মিত হয়ে যাওয়া প্রবাসীদের নিয়মিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জুলাই শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের জন্য সহায়তা
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ এবং আহত যোদ্ধাদের জন্যও আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত ৭৭৫টি শহীদ পরিবারকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ও মাসিক ভাতা দেওয়া হয়েছে। আহত ১৩ হাজার ৮০০ জন জুলাই যোদ্ধাকে তিনটি ক্যাটাগরিতে নগদ টাকা ও চেক বাবদ মোট ১৫৩ কোটি ৪ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। ৭৮ জন অতি গুরুতর আহত জুলাই যোদ্ধাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।
ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থানের নাম পরিবর্তন করে স্বৈরাচার ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে রাখা হয়েছিল, যা আমরা পরিবর্তন করে আগের বা মানানসই নাম করে দিয়েছি।
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কার
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিধ্বস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পুনর্গঠন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সচল ও নাগরিকদের কাছে দায়বদ্ধ করে তোলার জন্য কাজ করছি।
স্বৈরাচার আমলে দলীয় বাহিনীতে পরিণত হওয়া ভঙ্গুর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছি। পুলিশ যেন আর কখনো কোনো আন্দোলন দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করতে না পারে, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধে পুলিশ সদর দপ্তরে একটি বিশেষ ‘সেল’ কার্যকর করা হয়েছে।
সম্প্রতি সরকার ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুমোদন করেছে। এর ফলে আটককৃত ব্যক্তিকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরিবারকে জানাতে হবে, আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দিতে হবে এবং রিমান্ডের পর আহত হলে ডাক্তারের মাধ্যমে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে এবং এই আইনের অধীনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা বাতিল করা হয়েছে। নতুন সাইবার সুরক্ষা আইনে আগের আইনের নিবর্তনমূলক ধারাগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে।
সাইবার সুরক্ষা আইন সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আহ্বান ও নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন
প্রিয় দেশবাসী, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সৃষ্ট নতুন বাংলাদেশের যে সম্ভাবনা জাগ্রত হয়েছে, তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আপনারা আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। গত ১২ মাস ধরে আমরা জুলাইয়ের দাবি পূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছি।
আসুন, আজ জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, আমরা আর কখনো এই জাতিকে বিভক্ত হতে দেব না। আমরা সকল নাগরিকের প্রতি মর্যাদাশীল থাকব, তিনি যেই পরিচয়েরই হোন না কেন।
জুলাই তরুণদের উসিলায় জাতির আত্ম-আবিষ্কারের মাস। এটি ভুল শুধরে নেওয়ার এবং নতুন করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার শক্তি যোগানোর মাস।
নির্বাচন আসছে। যদি আপনি আপনার নির্বাচনী এলাকা থেকে দূরে বসবাস করেন, তবে এখন থেকে নিয়মিত তা পরিদর্শন করুন, যাতে সেরা ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে আপনি প্রস্তুত হতে পারেন। যাদের তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা এই অতি মূল্যবান ভোটাধিকার ফিরে পেলাম, ভোট দেওয়ার আগে যেন তাদের চেহারা আমাদের চোখে ভেসে ওঠে।
সবাই যেন বলতে পারি, “নতুন বাংলাদেশ” গড়ার পথে দেশকে রওনা করার জন্য আমি আমার ভোটটা দিয়েছিলাম।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসে সকল নাগরিকের কাছে আমার আহ্বান, আসুন, “নতুন বাংলাদেশ” গড়ার প্রথম বড় পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হই।
মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আল্লাহ হাফেজ।