ট্রাম্পের শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্তে ভারতের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা, শেয়ারবাজারে ধস, ঝুঁকিতে জিডিপি

তারিখ: বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট ২০২৫
আন্তর্জাতিক |
বাংলা নিউজ স্টেশন

trump and modi

রাশিয়ার সঙ্গে তেল বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর কঠোর অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। রাতারাতি ভারতীয় পণ্যের উপর শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছেন তিনি। ট্রাম্পের এই ঘোষণার পরপরই ভারতের শেয়ারবাজারে নেমে এসেছে বড় ধস।

শেয়ারবাজারে ধস, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকালেই ভারতের সেনসেক্স সূচক ৩৩৫.৭১ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৮০,২০৮.২৮ পয়েন্টে। নিফটি সূচকও ১১৪.১৫ পয়েন্ট পড়ে গিয়ে নেমে যায় ২৪,৪৬০.০৫-এ। হঠাৎ শুল্ক বৃদ্ধির খবরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে রপ্তানিনির্ভর খাতগুলোতে।

বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা: কমে যেতে পারে জিডিপি এইচডিএফসি সিকিউরিটিজ-এর সিইও ধীরাজ রেল্লি সতর্ক করে বলেন, “এই শুল্ক পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে ভারতের জিডিপিতে ৩০ থেকে ৪০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত প্রভাব পড়তে পারে।” তবে রিজার্ভ ব্যাংক আপাতত তাদের জিডিপি পূর্বাভাস ৬.৫ শতাংশেই অপরিবর্তিত রেখেছে।

কোটাক মাহিন্দ্রা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সিইও নিলেশ শাহের মতে, “শুল্ক দ্বিগুণ হওয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি একসঙ্গে ভারতের বিনিয়োগ পরিবেশকে প্রভাবিত করতে পারে।”

রপ্তানি খাতের ওপর ভয়াবহ চাপ ভারতের রপ্তানিকারকদের সংগঠন ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের সভাপতি এস.সি. রালহান বলেন, “ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ভারতীয় রপ্তানির জন্য বড় ধাক্কা। মার্কিন বাজারে আমাদের রপ্তানির প্রায় ৫৫ শতাংশ সরাসরি প্রভাবিত হবে।”

তিনি জানান, ৫০ শতাংশ পাল্টা শুল্কের ফলে ভারতের রপ্তানিকারকরা ৩০–৩৫ শতাংশ প্রতিযোগিতামূলক বাজার থেকে পিছিয়ে পড়বে।

যুক্তরাষ্ট্রে বিপদে ভারতীয় শিল্প ও কৃষি খাত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্কের মোকাবিলা করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত বছর দেশটি ৮৭.৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল মার্কিন বাজারে। কিন্তু বর্তমানে ভারতের গয়না ও সামুদ্রিক খাদ্য খাত ভয়াবহ চাপে রয়েছে।

ভারতের সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানিকারক সংস্থা বলেছে, ৫০% শুল্ক তাদের ৩ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। গত বছর গয়না খাত থেকেই রপ্তানি হয়েছিল ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য। ফলে হাজার হাজার কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।

ভারতের উৎপাদন খাতের ওপর প্রভাব ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের বিশ্লেষক শীলান শাহ বলেন, “ভারতকে উৎপাদন হাব হিসেবে বিবেচনা করায় বড় বাধা সৃষ্টি করবে এই শুল্ক।” তাঁর মতে, ভারতীয় পণ্যের রপ্তানিতে এই শুল্কের প্রভাব সরাসরি জিডিপিতে পড়বে এবং প্রবৃদ্ধি ৭% থেকে নেমে ৬%-এ চলে আসতে পারে।

মোদির বক্তব্য: কৃষকের স্বার্থে আপস নয় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, “ভারত কখনো তার কৃষকদের স্বার্থ নিয়ে আপস করবে না। আমাকে হয়তো ব্যক্তিগতভাবে মূল্য দিতে হবে, কিন্তু আমি প্রস্তুত।” তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।

ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতি ভারতের অর্থনীতিকে এক বিশাল চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়েছে। বিশেষ করে রপ্তানি নির্ভর খাত, শিল্প, কৃষি—সবকিছুতেই শুরু হয়েছে অস্থিরতা। এখন দেখার বিষয়, ভারত সরকার এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় কী ধরনের কৌশল গ্রহণ করে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কে ভবিষ্যৎ নীতি কীভাবে পুনর্গঠন করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *