গাইবান্ধা |১৫ আগস্ট ২০২৫

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারদহ ইউনিয়নের রসুলপুর বালুপাড়া গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বিদেশে গিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিলেন সাফিউল ইসলাম (২৫), কিন্তু দালালের প্রতারণা ও বৈধ কাগজপত্রের অভাবে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করতে হলো তাকে সৌদি আরবে
দিনমজুর বাবার সংসারে বড় হওয়া সাফিউল গত বছরের ১ মে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। এর পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে আরও ১ লাখ টাকা সুদে ধার করে গ্রামের এক প্রবাস ফেরত দালালের মাধ্যমে সৌদি আরব যান। দালাল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেখানে ভালো চাকরি ও আয় হবে।
কিন্তু বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় কোনো প্রতিষ্ঠান তাকে কাজে নেয়নি। শুরু হয় অনিশ্চিত জীবন, মসজিদ ও রাস্তায় ভিক্ষা করে ১৫ মাস কাটাতে হয়।
গত ২৮ জুলাই অসুস্থ হয়ে সৌদি আরবের একটি হাসপাতালের গেটে চিকিৎসা ও খাবারের অভাবে মৃত্যুবরণ করেন সাফিউল। মৃত্যুর সময় তার পাশে কেউ ছিল না, শুধু কিছু সহানুভূতিশীল প্রবাসী তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিলেন।
সাফিউলের বাবা-মা মোছা. মহিলা বেগম ও মো. জলিল শেখ এখন ছেলের মরদেহ দেশে আনার জন্যও টাকা জোগাড় করতে পারছেন না। তারা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,
“ছেলেকে সচ্ছলতার জন্য বিদেশে পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু দালালের কারণে সব শেষ হয়ে গেল।”
তারা দালালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
স্থানীয়দের দাবি, একই গ্রামের ‘মিস্টার’ নামে পরিচিত এক দালালের মাধ্যমে সাফিউল এবং রনি নামের আরেক যুবক সৌদি আরব যান। রনিও বর্তমানে চাকরি ছাড়া মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর থেকে ওই দালাল পলাতক।
গাইবান্ধা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মো. নেশারুল হক জানিয়েছেন,
“পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতে মরদেহ দেশে আনার জন্য সব ধরনের সরকারি সহযোগিতা করা হবে। দালালের মাধ্যমে বিদেশ যাওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ—এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”
তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন সাফিউল। তার অকাল মৃত্যুতে গোটা রসুলপুর বালুপাড়া গ্রাম এখন শোকে স্তব্ধ। গ্রামের প্রবীণরা বলছেন, দালালের প্রতারণা বন্ধ না হলে এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা থামানো যাবে না।
বাংলাদেশে প্রতিবছর হাজার হাজার যুবক অবৈধ বা অপ্রমাণিত দালালের মাধ্যমে বিদেশে যাচ্ছেন। অনেকেই সেখানে গিয়ে বৈধ কাগজপত্রের অভাবে কাজ পান না, অনেকে গ্রেফতার হন বা প্রাণ হারান। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বারবার সতর্ক করলেও সচেতনতার অভাবে দালালের ফাঁদে পা দিচ্ছেন অনেকেই।
সাফিউলের মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের শোক নয়—এটি দালালের প্রতারণার ভয়াবহ বাস্তবতার করুণ উদাহরণ। প্রতিটি পরিবারের উচিত সচেতন হওয়া এবং সরকারি অনুমোদিত প্রক্রিয়ার বাইরে কোনোভাবে প্রবাস যাত্রা না করা। নইলে স্বপ্নের বদলে ফিরে আসতে হবে লাশ হয়ে।