সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাজ করতে গিয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন এইচএসসি পরীক্ষার্থী রুম্মান আহমদ (২৩)। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তার কেবল দুটি পরীক্ষা বাকি ছিল। কিন্তু আইসিইউ বেড না পাওয়ায় তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ করেছে পরিবার।
পরিবারের আর্থিক কষ্ট মেটাতে চাকরি করতেন রুম্মান
রুম্মান তিন বোন দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। তার বাবা মদরিছ আলী একজন কৃষিশ্রমিক। সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিতে গিয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ করতেন রুম্মান। তিন বছর আগে চাচার মাধ্যমে বিমানবন্দরের ‘সানরাইজ এন্টারপ্রাইজ’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন। পরিবারের আর্থিক কষ্ট দূর করে সবার স্বপ্ন পূরণের স্বপ্নই ছিল তার।
দুর্ঘটনা: হঠাৎ বিস্ফোরণ, মুহূর্তেই থেমে গেল জীবন
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সকাল থেকে রুম্মান বিমানবন্দরে কাজ করছিলেন। বিকেলে বোর্ডিং ব্রিজের পুরনো চাকা খুলে নতুন চাকা বসানোর সময় হঠাৎ একটি চাকা বিস্ফোরিত হয়। পাশে থাকা সহকর্মী এনামুল হক বলেন,
“আমি আর রুম্মান একই পাশে ছিলাম। হঠাৎ ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি। হাসপাতালে এসে জ্ঞান ফেরে।”
বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন রুম্মান। দ্রুত তাকে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে আইসিইউ বেড না থাকায় ভর্তি করা সম্ভব হয়নি। পরে জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি মারা যান।
“আইসিইউ পেলে হয়তো বাঁচানো যেত” কান্নাজড়িত চাচার বক্তব্য
কফিনবন্দি মরদেহ নিতে এসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে রুম্মানের চাচা আলতাফ বলেন, “তাৎক্ষণিক আইসিইউ সাপোর্ট পেলে হয়তো আমার ভাতিজাকে বাঁচানো যেত। কিন্তু ওসমানীতে আইসিইউ ফাঁকা ছিল না। রাগীব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।” রুম্মানের মৃত্যুতে পুরো গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তার বন্ধু-স্বজনরা বলছেন। “রুম্মান পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ করে পরিবারের হাল ধরেছিল। এমন দুর্ঘটনা আমরা মেনে নিতে পারছি না।
ফুফাতো ভাই সুয়েব বলেন, “গতকালই ওর সাথে কথা হয়েছিল। ছুটি পেলে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু আর যাওয়া হলো না।”
পরিবারের দাবি: তদন্ত হোক, এমন দুর্ঘটনা আর যেন না ঘটে
রুম্মানের আরেক চাচা আব্দুল করিম বলেন, “একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ধরনের দুর্ঘটনা মানা যায় না। সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের চিহ্নিত করতে হবে।” । ওসমানী হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, “বিকেল আড়াইটার দিকে দুইজনকে আনা হয়। একজনের আইসিইউ সাপোর্ট দরকার ছিল। কিন্তু আমাদের সব বেড পূর্ণ ছিল। তাই তারা অন্য হাসপাতালে চলে যান।”
অন্যদিকে, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমেদ জানান, “পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।” ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। শুক্রবার (১ আগস্ট) বাদ জুমা তার গ্রামের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জানাজা সম্পন্ন হয় ।