রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার ১২ দিন পর আজ রবিবার (৩ আগস্ট) সীমিত পরিসরে খুলছে। তবে পাঠদান কার্যক্রম চালু হবে না। শিক্ষার্থীদের মানসিক প্রশান্তি ফিরিয়ে আনতে এবং তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর প্রথম ধাপ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর শোকাচ্ছন্ন মাইলস্টোন
গত ২১ জুলাই দুপুরে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণরত যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনাক্রমে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিধ্বস্ত হয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তেই আগুনে পুড়ে যায় শ্রেণিকক্ষ। এতে প্রাণ হারান ৩৪ জন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল শিশু শিক্ষার্থী। আহত হন বহু শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। নিহতদের মধ্যে ছিলেন রাইসা, মনী, মাহতাব, মেহরিন ম্যামের মতো অনেক প্রিয় মুখ, যারা আর কোনোদিন ফিরে আসবেন না।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, পুরো দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। শিক্ষার্থীদের প্রাণ হারানোর বেদনাবিধুর স্মৃতি এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে সহপাঠীদের। এটি দেশের অন্যতম মর্মান্তিক দুর্ঘটনা হিবেসবেও বিবেচিত হয়েছে ।
১২ দিন পর ক্যাম্পাস খোলার সিদ্ধান্ত
প্রথমে কলেজটি তিন দফায় ছুটি ঘোষণা করে। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বস্তি বিবেচনায় ২ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অবশেষে ১২ দিন পর আজ থেকে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া হচ্ছে।
তবে কর্তৃপক্ষ আরো জানিয়েছেন, আজ কোনো শ্রেণি কার্যক্রম বা পরীক্ষা হবে না। বরং শিক্ষার্থীরা আজ তাদের প্রিয় শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা করতে পারবে, কুশল বিনিময় করতে পারবে এবং একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে মনোবল ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করবে।
দোয়া মাহফিল ও কাউন্সেলিংয়ের আয়োজন
কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল বলেন, “২১ জুলাইয়ের ঘটনার পর থেকে পুরো ক্যাম্পাস শোক ও বেদনায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক করাই আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার।”
তিনি আরও জানান, নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় আজও দোয়া মাহফিল হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অস্থায়ী চিকিৎসা ক্যাম্প এবং মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা কেন্দ্র চালু রয়েছে, যেখানে মনোবিজ্ঞানীরা শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং করবেন।
অধ্যক্ষের আবেগঘন বক্তব্য
গতকাল শোকসভায় অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন (অব.) জাহাঙ্গীর খান আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “সেদিন শিক্ষক নিয়োগের সাক্ষাৎকারে ডাক পড়েছিল বলেই দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগে স্থান ত্যাগ করেছিলাম। না হলে হয়তো আজ আমিও থাকতাম না।” তিনি নিহত শিক্ষার্থীদের জন্য দোয়া করেন এবং শিক্ষকদের সাহসিকতার প্রশংসা করেন।
শিক্ষার্থীদের মানসিক প্রশান্তির উদ্যোগ
কলেজ ক্যাম্পাসে বিমান বাহিনীর সহায়তায় চিকিৎসা শিবির চালু রয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখানে শারীরিক ও মানসিক সহায়তা পাচ্ছে। দুর্ঘটনার ভীতি কাটিয়ে ওঠার জন্য বিশেষ কাউন্সেলিং সেশন চলছে।
শিক্ষকদের পাশাপাশি নিহতদের পরিবার ও সহপাঠীরা স্মরণসভায় অংশ নিচ্ছেন। এক মিনিট নীরবতা পালন ও দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে নিহতদের স্মরণ করা হবে।
মানবিক উদাহরণ স্থাপন করলো মাইলস্টোন
এই দুর্ঘটনা শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, দেশের শিক্ষাজগতেও গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। তবে দ্রুত উদ্ধার, সহায়তা কার্যক্রম, দোয়া মাহফিল এবং আজকের মতো পুনর্মিলনী আয়োজন প্রমাণ করছে যে, মাইলস্টোন কলেজ শুধু পাঠদানেই নয়, মানবিক মূল্যবোধেও শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
আজকের দিনটি কোনো পাঠ্যসূচির অধ্যায় নয়, বরং এক অমলিন শিক্ষা—কীভাবে বিপর্যয়ের পরেও একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে জীবনের নতুন সূচনা করা যায়।