বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনায় এক ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্কহার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামানো হয়েছে। এই সাফল্যকে ‘সুস্পষ্ট কূটনৈতিক বিজয়’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার (৩১ জুলাই) নতুন শুল্ক ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এরপর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শুল্ক আলোচক দলকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “এটি বাংলাদেশের জন্য সুস্পষ্ট এক কূটনৈতিক সাফল্য। আলোচকরা অসাধারণ কৌশলগত দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন এবং দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় অবিচল থেকেছেন।”
কীভাবে হলো এই চুক্তি?
জানা যায়, ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনা দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে চলে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশি প্রতিনিধিদল শুল্ক ও অশুল্ক বাধা এবং জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত জটিল আলোচনার মধ্য দিয়ে এই সাফল্য অর্জন করে। প্রধান আলোচনায় অংশ নেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দেন মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি (USTR) ব্রেন্ডন লিঞ্চ। এই আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ ৩৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে শুল্ক নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়। এর বিনিময়ে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য আমদানির প্রতিশ্রুতি দেয়, যা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মার্কিন কৃষি রাজ্যগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করবে।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এক অভিনন্দন বার্তায় বলেন:
“শুল্কহার ২০ শতাংশ করা হয়েছে, যা আগের তুলনায় ১৭ শতাংশ কম। এই সাফল্য বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে। বিশ্বের বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে আমাদের প্রবেশাধিকার এখন আরও বাড়ল, যা অর্থনীতিতে ত্বরান্বিত প্রবৃদ্ধি ও দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধির পথ খুলে দেবে।” তিনি আরও বলেন, “এটি কেবল একটি অর্থনৈতিক সাফল্য নয়, এটি বাংলাদেশের দৃঢ়তা ও ভবিষ্যতের সাহসী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক।”
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার প্রতিক্রিয়া
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, “আমরা সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক এড়াতে পেরেছি। এটি আমাদের পোশাক শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং লাখ লাখ শ্রমিকের জীবিকা রক্ষায় সহায়ক হবে। আমরা আমাদের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছি।”
পোশাক শিল্পের জন্য সুসংবাদ
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র এই খাতের অন্যতম প্রধান বাজার। শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার ফলে শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার মতো প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে সমান অবস্থানে থাকবে বাংলাদেশ। এদিকে ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হওয়ায় এই চুক্তি বাংলাদেশের জন্য আরও সুবিধাজনক হয়ে উঠেছে।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
ট্রাম্প প্রশাসন নতুন বাণিজ্য নীতির মাধ্যমে ৭০টি দেশের ওপর সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছিল। সেখানে বাংলাদেশের শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা একটি বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
- এই চুক্তির ফলে:
- মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা ধরে রাখা সম্ভব হবে।
- পোশাক শিল্পের রপ্তানি আরও বাড়বে।
- নতুন বাজারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হবে।
- অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আজকের সাফল্য বাংলাদেশের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই অর্জন আমাদের জাতিকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে এবং অর্থনীতিকে দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেবে।”