ডেস্ক রিপোর্ট | বাংলা নিউজ স্টেশন | ৮ আগস্ট ২০২৫, বৃহস্পতিবার

এই বর্ণনায় হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার প্রবাসফেরত বাহার উদ্দিনের, যিনি নিজে বেঁচে ফিরলেও হারিয়েছেন পরিবারের ৭ জন প্রিয়জন। ওমান থেকে ফিরে বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরার পথে ঘটে যায় ভয়াবহ ট্র্যাজেডি। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইক্রোবাস সড়কের পাশের খালে পড়ে গেলে প্রাণ হারান তার মা, দুই পুত্রবধূ, তিন নাতনি এবং নানী।
মঙ্গলবার রাতের এ দুর্ঘটনায় নিহত হন:
- মা: মোরশেদা বেগম (৫০)
- পুত্রবধূ: কবিতা আক্তার (২৪), লাবনী আক্তার (২৫)
- নাতনি: মীম (২), রেশমা (৯), লামিয়া (৮)
- নানী: ফয়জুন নেছা (৭০)
পরদিন বুধবার বাদ আসর উত্তর জয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ৭ জনের একসাথে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরে কাশারি বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে মোরশেদা বেগমসহ ছয়জনকে পাশাপাশি কবর দেয়া হয়, আর নানী ফয়জুন নেছাকে দাফন করা হয় তার নিজ বাড়ি হাজিরপাড়ায়।
বৃহস্পতিবার সকালে নিহতদের বাড়িতে গেলে দেখা যায় শোকের মাতম। নিহত কবিতার বোন লিপি বারবার বোন আর ভাগনিদের ডাকছেন, যেন তারা আবার ফিরে আসে। নিহত লাবনী ও তার মেয়ে লামিয়ার জন্য কাঁদছেন নানা-নানীসহ আত্মীয়স্বজন। তাদের চোখে শুধুই এক প্রশ্ন—কেন?
আরো পড়ুন ঃ স্ত্রী মেয়েকে ছাড়া বের হয়নি, মা নানিকে ছাড়া বের হননি: প্রবাসী বাহারের হৃদয়বিদারক কান্না
প্রাণে বেঁচে গেছেন যারা:
- বাহার উদ্দিন (ওমান ফেরত)
- আব্দুর রহিম (বাহারের বাবা)
- ইস্কান্দার মির্জা (শ্বশুর)
- সুইটি আক্তার (ভাবি)
- রিয়াজ হোসেন (শ্যালক)

ঘুমন্ত চালক ও বিচার দাবি
প্রত্যক্ষদর্শী ও বেঁচে ফেরা স্বজনদের দাবি, চালক আকবর হোসেন (২৪) গাড়ি চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। দুর্ঘটনার পর পালিয়ে যান তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, তাকে আটকের চেষ্টা চলছে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করার প্রস্তুতিও চলছে।
গাড়ির মালিক রাসেল এলেও চালক সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি বলে জানায় পরিবার।
বাহার উদ্দিন বলেন, “গাড়ি পড়ে যাওয়ার পর অনেক মানুষ ছিলো রাস্তায়, আমি চিৎকার করছিলাম, পা ধরছিলাম, কেউ এগিয়ে আসেনি।” এ দৃশ্য আজীবন চোখে লেগে থাকবে এই প্রবাসীর।
এক দুর্ঘটনায় ভেঙে গেছে একটি পরিবারের প্রাণ, স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ। ঘুমন্ত চালকের গাফিলতি, পথচারীদের নির্লিপ্ততা এবং ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সব মিলিয়ে এক অন্ধকার গল্প হয়ে রয়ে যাবে কাশারি বাড়ির এই ট্র্যাজেডি।