২৪ দিনেও নিখোঁজ অরিত্রর সন্ধান মেলেনি, সমুদ্রপাড়ে কাঁদেছেন অসহায় বাবা-মা

banglanewsstation, bangla news staiton ,coxbazar aritra

“আমার ছেলে অরিত্রের গন্ধ এখনো আমার গায়ে লেগে আছে। আমি বিশ্বাস করি, একদিন ফোন করে বলবে—বাবা, আমাকে নিয়ে যাও।” — এভাবেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন নিখোঁজ অরিত্র হাসানের বাবা সাকিব হাসান।

কক্সবাজারের হিমছড়ি সৈকতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হওয়ার ২৪ দিন পার হলেও অরিত্রর কোনো সন্ধান মেলেনি। সাগরপাড়ে দিন-রাত ছুটে বেড়িয়ে একমাত্র সন্তানকে খুঁজে ফেরার পরও ব্যর্থ হয়ে বুকে পাথর বেঁধে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছেন এই বাবা-মা।

হৃদয়বিদারক নিখোঁজের ঘটনা

গত ৭ জুলাই সকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী অরিত্র হাসান তাঁর দুই বন্ধু সাদমান রহমান ও আসিফ আহমেদকে নিয়ে হিমছড়ি সৈকতে গোসল করতে নামেন। মুহূর্তের মধ্যে সাগরের স্রোতে ভেসে যান তিনজনই। দুই ঘণ্টা পর সাদমানের লাশ উদ্ধার হয় হিমছড়ি সৈকতেই। পরদিন ৮ জুলাই সকালে নাজিরারটেক শুঁটকি মহালের কাছে ভেসে ওঠে আসিফের লাশ। কিন্তু আজও অরিত্রর কোনো খোঁজ মেলেনি।

দিন-রাত সাগরপাড়ে খোঁজে বাবা-মা

অরিত্রর মা জেসমিন আক্তার বলেন, “ছেলেকে সমুদ্রে ফেলে রেখে কীভাবে ঘরে ফিরি? প্রতিদিন আজান দিয়ে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেছি। হুজুরের পরামর্শে সমুদ্রপাড়ে দোয়া করেছি।”

টানা ১০ দিন সাগরের পাড়ে থেকে দিন-রাত ছুটেছেন বাবা-মা। আশপাশের মেরিন ড্রাইভ, ইনানী, নাজিরারটেক—কোথাও বাদ রাখেননি তাঁরা। কিন্তু কোনো সাড়া পাননি।

ড্রোন, স্পিডবোট, ওয়াটারবাইকেও ব্যর্থ তল্লাশি

জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ফায়ার সার্ভিস, পর্যটন পুলিশ, বিচকর্মী, সি-সেফ লাইফগার্ড ও বাংলাদেশ বিমানবাহিনী যৌথভাবে ড্রোন, স্পিডবোট ও ওয়াটারবাইক ব্যবহার করে টানা ১১ দিন সাগরে তল্লাশি চালিয়েছে। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা জেলেদেরও বলা হয়েছিলো লাশের খোঁজ পেলে জানাতে। কিন্তু কোনো ফল মেলেনি।

অসহায় প্রার্থনা নিয়ে ফেরা বাবা-মা

অরিত্রর বাবা সাকিব হাসান বলেন, “শুনেছি, সাগর যা নেয় তা ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু আমার অরিত্রকে কেন ফিরিয়ে দিচ্ছে না? কোনো অবস্থাতেই তাকে ফেলে যেতে চাই না।”

তবে দীর্ঘ অনুসন্ধান ব্যর্থ হওয়ায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে অবশেষে ঢাকায় ফিরেছেন তারা। যাওয়ার সময় সাগরপাড়ে দাঁড়িয়ে লাইফগার্ড ও বিচকর্মীদের অনুরোধ করেছেন, তল্লাশি অব্যাহত রাখতে।

এখনো চলছে অনুসন্ধান, মিরাকেলের আশায় স্বজনরা

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল আলম বলেন, “২৪ দিনেও অরিত্রর খোঁজ নেই। অলৌকিক কিছু না ঘটলে জীবিত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তারপরও আমরা নানাভাবে খোঁজ চালাচ্ছি।”

বাবা সাকিব বলেন, “আমি বিশ্বাস করি মিরাকেল হতে পারে। একদিন আমার ছেলে ফোন করবে, বলবে—বাবা, আমাকে নিয়ে যাও। আমরা আবার কক্সবাজারে ফিরে আসব ছেলেকে খুঁজতে।”

এই ঘটনার পর সমুদ্রপাড়ে মানুষের ভিড় বেড়েছে। অরিত্রর নাম ধরে এখনও দোয়া করে যাচ্ছেন তাঁর মা। কক্সবাজারের বালুকাবেলায় প্রতিদিন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে এক অসহায় মায়ের আকুতি—
“আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও আল্লাহ।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *