কক্সবাজার, ৯ আগস্ট ২০২৫

৭ জুলাই সকাল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র অরিত্র হাসান তিন বন্ধু নিয়ে গেলেন হিমছড়ির সৈকতে। একটু ফুরফুরে মন নিয়ে, জীবনের সেই তরুণ গলার হাসি নিয়ে। কিন্তু জীবন যেন যেন খেলা খেলল তাদের সঙ্গে। মুহূর্তের মধ্যে স্রোতের ঘূর্ণিতে তারা হারিয়ে গেলেন। সাদমান ও আসিফের লাশ উদ্ধার হলেও অরিত্র আজও ফিরতে পারেনি বাড়ির দিকে।
অরিত্রের মা জেসমিন আক্তার বলেছেন,
“আমার ছেলে যেখানে হারিয়েছে জীবন, আমি সেই সাগরকেই মায়ের কোলে মনে করি। প্রতিদিন আল্লাহর কাছে চাওয়া আমার শেষ ভরসা, যেন সে ফিরতে পারে।”
বাবা সাকিবের ভাঙা কণ্ঠ, চোখের জলে লেখা কথাগুলো সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়,
“আমার ছেলের গন্ধ এখনও আমার গায়ে লেগে আছে। আমি মনের গভীরে বিশ্বাস রাখি, সে একদিন আমাকে ফোন করবে।”

“আমার ছেলের গন্ধ এখনও গায়ে লেগে আছে, মনে হয় সে এখনো আমাদের কাছে আছে। আমি বিশ্বাস করি, একদিন সে আমাকে ফোন করবে, বলবে—‘বাবা, আমাকে নিয়ে যাও।’” — কান্নায় ভেঙে পড়লেন অরিত্র হাসানের বাবা সাকিব হাসান। দীর্ঘ ৩১ দিন কেটে গেলেও কক্সবাজারের হিমছড়ি সৈকতে নিখোঁজ এই তরুণ শিক্ষার্থীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। সমুদ্রপারের বালুকায় আজও লেগে আছে তার মায়াবী সুর, আর বাবা-মায়ের চোখে অঝোর ধারায় বয়ে চলেছে আশা আর দুঃখের জোয়ার।
তারা ৩১ দিন ধরে সাগরের বালুকায় দাঁড়িয়ে আশায় বুক বেঁধেছে। মেরিন ড্রাইভ থেকে ইনানী, নাজিরাটেক থেকে হিমছড়ি—প্রতিটি জায়গায় সন্ধান চালিয়েছে বাবা-মা। কিন্তু ফেরার কোনো খোঁজ মেলেনি।
আমার ছেলে অরিত্রের গন্ধ এখনো আমার গায়ে লেগে আছে
জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, বিমানবাহিনী ও অন্যান্য সংস্থা ড্রোন, স্পিডবোট ও ওয়াটারবাইক দিয়ে দীর্ঘদিন অনুসন্ধান চালিয়েও কোনো সাফল্য পায়নি। গভীর সাগর যেন তার এক সন্তানের সন্ধান দেয়নি।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল আলম জানালেন,
“৩১ দিনেও অরিত্রর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। জীবিত পাওয়ার সম্ভাবনা কম, কিন্তু আমরা চেষ্টা থামাবো না।”
অরিত্রের বাবা সাকিব হাসান বললেন,
“আমি বিশ্বাস করি মিরাকেল ঘটবে। আমার ছেলে ফিরে আসবে, আর আমরা আবার একসঙ্গে হাঁটব এই সমুদ্র সৈকতে।”
অরিত্রের নাম এখনও কক্সবাজারের বালুকাবেলায় উচ্চারিত হয় মায়ের অশ্রুতে ভেজা গলায়। মানুষের ভিড় বাড়ছে, যারা দোয়া করছেন নিখোঁজের জন্য। এক অসহায় মায়ের আকুতি এখনও অনায়াসে শোনা যায়—
“আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও, আল্লাহ।”
৩১ দিনেও অরিত্র ফিরেনি, কিন্তু তার স্মৃতি, তার হাসি, তার পরিবারের প্রার্থনা আজও জীবন্ত। হারানো এই তরুণের জন্য কক্সবাজারের মানুষ দোয়া করছে। একসময় যেন সমুদ্র তার সন্তানকে ফিরিয়ে দেয়, আর পরিবারের বুক থেকে বেদনা মুছে যায়।


