কক্সবাজারের হিমছড়িতে নিখোঁজ চবি শিক্ষার্থী অরিত্রকে ঘিরে বিভ্রান্তি, চলছে তীব্র অনুসন্ধান অভিযান

banglanewsstation, bangla news station, aritra coxbazar

কক্সবাজারের হিমছড়ি সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী অরিত্র হাসানকে (২২) ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই দাবি করেছেন, অরিত্র নাকি বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা পেরিয়ে চলে গেছেন। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও অরিত্রের পরিবার এ ধরনের তথ্য স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছে।

প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম নিশ্চিত করেছে, এখনো অরিত্রের সন্ধান মেলেনি। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী পর্যন্ত সাগরের গভীরে ড্রোন উড়িয়ে তাকে খুঁজছে। ফায়ার সার্ভিস, পর্যটন পুলিশ, সৈকতকর্মী ও বেসরকারি লাইফগার্ডদের যৌথ অভিযানে প্রতিদিনই হিমছড়ি থেকে শুরু করে টেকনাফের নাফ নদীর মোহনা পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় তল্লাশি চলছে।

কীভাবে ঘটল এ মর্মান্তিক ঘটনা?

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের ছাত্র অরিত্র হাসান গত ১৬ জুলাই সকালে দুই বন্ধু—কে এম সাদমান রহমান ও আসিফ আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে নামেন। ঢেউয়ের তীব্র তোড়ে একসঙ্গে তিনজনই ভেসে যান। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হিমছড়ি সৈকতে ভেসে আসে সাদমানের মরদেহ। পরদিন সকালে নাজিরারটেক শুঁটকি মহাল এলাকা থেকে উদ্ধার হয় আসিফের মরদেহ। কিন্তু অরিত্রের কোনো খোঁজ মেলেনি।

এই ঘটনায় এলাকায় শোক নেমে আসে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও শোকের আবহ ছড়িয়ে পড়ে। বন্ধুরা ও সহপাঠীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অরিত্রের জন্য প্রার্থনা করছেন।

নিরবচ্ছিন্ন অনুসন্ধান ও প্রযুক্তির ব্যবহার

আরো পরুনঃ ২৪ দিনেও নিখোঁজ অরিত্রর সন্ধান মেলেনি, সমুদ্রপাড়ে কাঁদেছেন অসহায় বাবা-মা

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেছেন, “অরিত্রকে উদ্ধারের জন্য আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। বিমানবাহিনীর ড্রোন ব্যবহার করে সাগরের গভীরে তল্লাশি চলছে। দ্রুতগতির স্পিডবোটও ব্যবহার করা হচ্ছে।”

তল্লাশি কার্যক্রমে কক্সবাজারের উপকূল থেকে মহেশখালী, সোনাদিয়া, বাঁকখালী নদীর মোহনা এবং প্যারাবন পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে।

সি সেফ লাইফগার্ডের আঞ্চলিক পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “আমরা সমুদ্রের স্রোতের গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করছি। শুক্রবার পুরো উপকূলজুড়ে অনুসন্ধান চালানো হলেও অরিত্রের খোঁজ পাওয়া যায়নি।”

banglanewsstation, bangla news staiton ,coxbazar aritra
banglanewsstation, bangla news staiton ,coxbazar aritra

পরিবারের আর্তি ও মর্মস্পর্শী অপেক্ষা

অরিত্রের বাবা সাকিব হাসান, যিনি ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক, ছেলে নিখোঁজের খবর পাওয়ার পর স্ত্রীকে নিয়ে হিমছড়ি সৈকতে অবস্থান করছেন। আবেগমাখা কণ্ঠে তিনি বলেন,
“অরিত্র আমার একমাত্র সন্তান। খুব যত্ন করে বড় করেছি। মেধাবী ছিল ছেলেটা। হঠাৎ করেই সবকিছু শেষ হয়ে গেল। অন্য দুই বন্ধুর মরদেহ পেয়েছি, কিন্তু আমার ছেলের কোনো খোঁজ নেই।”

মা-বাবা সৈকতে বসে প্রতিদিন সমুদ্রের দিকে চেয়ে থাকছেন। নেটিজেনরা তাদের আবেগঘন ছবি শেয়ার করে সমবেদনা ও প্রার্থনার বার্তা দিচ্ছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি

ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানারকম গুজবও ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ বলছেন, অরিত্র নাকি সমুদ্রের স্রোতে ভেসে বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়েছে, আবার কেউ ভিন্ন দাবি তুলছেন। এসব বিভ্রান্তি পরিবারকে আরও ভোগান্তিতে ফেলছে।

জেলা প্রশাসক পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, “অরিত্র বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা অতিক্রম করেছেন—এমন কোনো প্রমাণ নেই। সব অনুসন্ধান কার্যক্রম দেশের সমুদ্রসীমা এবং পার্শ্ববর্তী উপকূলে চালানো হচ্ছে।”

কক্সবাজার উপকূলের ভাঙন পরিস্থিতি ও উদ্বেগ

এদিকে হিমছড়ি সৈকত এলাকায় সমুদ্রের ভাঙন দেখা দিয়েছে। ঝাউবাগান বিলীন হয়ে যাওয়ায় সাগরের ঢেউয়ের তীব্রতা বেড়েছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, এই প্রবল স্রোতের কারণেই অরিত্র গভীর সাগরে তলিয়ে যেতে পারে।

তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও আশায় বুক বেঁধে পরিবার

ঘটনার পর থেকে টানা তিন সপ্তাহের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও অরিত্রের সন্ধান মেলেনি। তবুও তার বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজন আশা ছাড়ছেন না। তাদের বিশ্বাস, এখনো হয়তো কোনোভাবে অরিত্র বেঁচে আছেন বা তার খোঁজ মিলবে।

অরিত্রের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সকলেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রার্থনার ঝড় তুলছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট: অরিত্র এখনো নিখোঁজ, কিন্তু তার নিখোঁজের কারণ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো বিভ্রান্তিকর তথ্যগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কর্তৃপক্ষের অনুসন্ধান ও তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সঠিক তথ্যের জন্য কেবল সরকারি ও নির্ভরযোগ্য সংবাদ মাধ্যমের ওপর নির্ভর করাই জরুরি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *