স্ত্রী মেয়েকে ছাড়া বের হয়নি, মা নানিকে ছাড়া বের হননি: প্রবাসী বাহারের হৃদয়বিদারক কান্না

banglanewsstation, bangla news staiton

ওমান থেকে স্বপ্নের বাড়ি ফিরেছিলেন বাহার উদ্দিন। কিন্তু সেই ফেরা মুহূর্তই পরিণত হলো দুঃস্বপ্নে। বিমানবন্দর থেকে নিজ বাড়ি ফেরার পথে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে মাইক্রোবাস খালে পড়ে প্রাণ হারান তার মা, স্ত্রী, মেয়ে, নানীসহ একই পরিবারের সাতজন। প্রবাসীর সেই স্বপ্নমাখা যাত্রা এক মর্মান্তিক শোকে রূপ নিল।

হৃদয়বিদারক স্বীকারোক্তি: স্ত্রী-মা কেউই বের হতে চাননি প্রিয়জনকে ছেড়ে

দুর্ঘটনার পর জীবিত প্রবাসী বাহার উদ্দিন বলেন, “আমার স্ত্রীকে জানালা দিয়ে বের করতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে মেয়েকে ছাড়া বের হয়নি। মাকেও টানছিলাম, কিন্তু তিনি নানিকে ছাড়া বের হননি। একে একে সবাই ডুবে গেল।”

এই একেকটি কথা যেন ভেঙে দেয় উপস্থিত সবার হৃদয়। প্রিয়জনকে আঁকড়ে ধরেই তারা হারিয়ে গেলেন খালের পানির গভীরে।

কীভাবে ঘটল দুর্ঘটনা?

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম চৌপল্লী গ্রামের প্রবাসী বাহার উদ্দিন দীর্ঘ আড়াই বছর পর দেশে ফেরেন। মঙ্গলবার রাতেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মাইক্রোবাসে ঢাকার বিমানবন্দর থেকে রওনা দেন। ভোরে নোয়াখালীর চন্দ্রগঞ্জ পূর্ব বাজারে পৌঁছালে চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। গাড়িটি পাশের রহমতখালী খালে পড়ে যায়।

সেসময় দরজা লক থাকায় দ্রুত বের হতে না পেরে পানির স্রোতে তলিয়ে যান সাতজন। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পানির নিচে আটকে থাকার পর তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।

🔗 আরও পড়ুনঃ স্বপ্নের বাড়িতে ফিরল ঠিকই, তবে নিথর হয়ে গেল আরও ৭ প্রাণ

নিহতদের তালিকা

  • মুরশিদা (৫০), বাহারের মা
  • কবিতা (২৩), বাহারের স্ত্রী
  • মীম (২), বাহারের মেয়ে
  • ফয়জুন নেছা (৭০), নানী
  • লাবনী (২৫), ভাইয়ের স্ত্রী
  • লামিয়া (৮), ভাতিজি
  • রেশমী (৯), ভাতিজি

বুধবার সকালে নিহতদের মরদেহ একে একে গ্রামে পৌঁছালে আহাজারিতে ভেঙে পড়েন স্বজনরা। পুরো এলাকা শোকে মুহ্যমান। স্বজন হারিয়ে বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন পরিবার-পরিজনেরা।

banglanewsstation, bangla news station 15

চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মোবারক হোসেন ভূঁইয়া জানান, চালকের চোখে ঘুম থাকার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর চালক পলাতক রয়েছে। মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়েছে এবং মামলা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

আড়াই বছর পর দেশে ফেরার আনন্দ মুহূর্তেই শোকে পরিণত হলো বাহার উদ্দিনের জীবনে। প্রিয়জনদের লাশ বুকে নিয়ে স্বপ্নের বাড়ি ফিরলেন তিনি। যে যাত্রা ছিল আনন্দের, সেটিই হয়ে গেল মৃত্যুর মিছিল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *