সাদাপাথরের বালুচর লুটপাট: পর্যটনকেন্দ্রটি ধ্বংসের মুখে, প্রশাসন পদক্ষেপে

আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০২৫
প্রকাশক: বাংলা নিউজ স্টেশন

screenshot 2025 08 14 105854
ছবি সংগৃহীত

পর্যটকরা ধূ ধূ বালুচরে হতাশ

কুমিল্লা থেকে আসা পর্যটক মো. নোমান আহমদ বলেন, “এখানে কর্তৃপক্ষের সামনে লুটপাট চলছে। আগে যা পাথর ছিল, এখন নেই। এই পর্যটনকেন্দ্র রাতারাতি ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, এটি পুনরুজ্জীবিত করতে হবে।”

অন্য সদস্য হোসাইন মো. এরশাদ যোগ করেন, “এর আগে এখানে প্রচুর পাথর ছিল। এখন প্রশাসনের চোখের সামনে এগুলো শেষ হয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানে, পাথরগুলো কোথায় আছে।”

সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এখন শুধু বালু আর বালু। ভোলাগঞ্জ থেকে নৌকা করে যাওয়ার পথে পাহাড় ও ধলাই নদীর স্বচ্ছ জল দেখে পর্যটকরা মোহিত হলেও নেমে পাথর না দেখে হতাশা প্রকাশ করছেন।

প্রশাসনের পদক্ষেপ

সাম্প্রতিক সমালোচনার পর সিলেট জেলা প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। বুধবার জরুরি বৈঠকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে:

  • চুরি হওয়া পাথর উদ্ধার করে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা।
  • সাদাপাথর ও জাফলং ইসিএ এলাকায় ২৪ ঘণ্টা যৌথবাহিনী দায়িত্ব পালন।
  • গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে চেকপোস্টে সার্বক্ষণিক টহল।
  • অবৈধ পাথর ভাঙা মেশিনের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ও বন্ধ করার অভিযান।
  • পাথর চুরিতে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় আনা।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, “লুটপাটের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিন সদস্যের কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। রোববারের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।”

পর্যটন ব্যবসায় প্রভাব

লুটপাটের কারণে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের সৌন্দর্য হারাচ্ছে, ফলে পর্যটক সংখ্যা কমছে।

মুন্সীগঞ্জ থেকে আসা পর্যটক মো. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, “মোবাইলে দেখে বিমোহিত হয়ে এসেছি। এসে হতাশ হলাম, সব জায়গায় পাথর নেই। প্রায় ৮০% পাথর চুরি হয়ে গেছে।”

ফটোগ্রাফি সোসাইটির সভাপতি মো. আলমগীর আলম জানান, “এভাবে চললে এক হাজারের বেশি ব্যবসায়ী এবং ১৫০ জন ফটোগ্রাফার বেকার হবেন। পর্যটক আসবে না।”

ঘোড়া ভাড়া দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা হাসান মিয়া বলেন, “পাথর লুটের কারণে আগের মতো পর্যটক নেই। আমরা পরিবার চলাতে পারছি না।”

লুটপাট ও পরিবেশের ক্ষতি

সাদাপাথরের বাম থেকে বাংকার পর্যন্ত পাথর উত্তোলনের জন্য অসংখ্য গর্ত করা হয়েছে। কোথাও গভীরতা তিন থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত। ফলে বালু ভেসে উঠেছে এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারাচ্ছে।

পরিবেশবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, “সাদাপাথর পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে হলে এলাকা ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা করতে হবে এবং লোকসমাগম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নদীকে নদীর মত থাকতে দিতে হবে।”

স্থানীয়দের অভিযোগ ও মানববন্ধন

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, লুটপাটে রাজনৈতিক নেতাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ধলাই পাড়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি চলেছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা সিলেট জেলা শাখা দাবি জানিয়েছে, অবৈধ পাথর উত্তোলনকারীদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সাদাপাথরের পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন জামিল আহমেদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক কাসমির রেজা লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

পর্যবেক্ষণ ও তদন্ত

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা রাফি মো. নাজমুস সাদাত বলেন, “এটা স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্ব। প্রশাসন আরও সতর্ক থাকতে হতো। খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো লুট ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।”

কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের মাহমুদ আদনান জানিয়েছেন, ২০টি মামলা করা হয়েছে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে স্পেশাল টাস্কফোর্স অভিযান চালানো হচ্ছে।

স্থানীয়দের আহ্বান

পরিবেশবাদী ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, “প্রশাসন কার্যকর না হলে সাদাপাথরের প্রকৃতি ও পর্যটন শিল্প উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং লুটপাট বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *