🗓️ শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫ | সিলেট প্রতিনিধি

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর এলাকায় নজিরবিহীন লুটপাটের পর প্রশাসনের অভিযানে উদ্ধার হলো বিপুল পরিমাণ পাথর। গত দুইদিনে প্রায় ১ লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে, যার অর্ধেক ইতোমধ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে মূল এলাকায়। বাকিগুলো প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
সাদাপাথরে টানা অভিযান, উদ্ধার লাখ ঘনফুট পাথর
জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেল জানিয়েছে, বুধবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত টানা অভিযানে মোট ১ লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) একদিনেই প্রায় ৪৫ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার হয়। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব পাথর জব্দ করে প্রশাসন।
অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (গোপনীয় শাখা ও মিডিয়া সেল) মো. মাসুদ রানা।
মাটিচাপা অবস্থায় উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ পাথর
শুক্রবার খবর পেয়ে প্রশাসন অভিযান চালায় কোম্পানীগঞ্জের কলাবাড়ি এলাকায়। সেখানে দেখা যায়, ক্রাশার মালিকরা অভিনব কৌশলে মাটির নিচে বিপুল পরিমাণ পাথর লুকিয়ে রেখেছেন।
অভিযানে উদ্ধার হওয়া পাথরের মধ্যে ৭ ট্রাক পাথর তাৎক্ষণিকভাবে সাদাপাথরে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও প্রায় ৫,০০০ ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে, যা শনিবার ফেরত পাঠানো হবে।
জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (রাজস্ব শাখা ও জেলা ব্র্যান্ডিং সেল) মাহমুদ আশিক কবির বলেন,
“কলাবাড়িতে মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা বিপুল পরিমাণ পাথর উদ্ধার হয়েছে। সাত ট্রাক পাথর ফেরত দেওয়া হয়েছে, বাকি অংশও প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।”
জাফলংয়েও অভিযান, উদ্ধার ৮,৫০০ ঘনফুট পাথর
একইসাথে সিলেটের আরেক পর্যটনকেন্দ্র জাফলং থেকেও উদ্ধার অভিযান চলছে। গত দুইদিনে সেখানে ৮,৫০০ ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুইদিন ধরে পিয়াইন নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন স্থান থেকে এসব পাথর উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত পাথর নৌকাযোগে জাফলং জিরোপয়েন্টে পুনঃপ্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারীর নেতৃত্বে প্রশাসন, পুলিশ ও বিজিবির সমন্বয়ে এই যৌথ অভিযান পরিচালিত হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন—
- সংগ্রাম বিওপির ক্যাম্প কমান্ডার শহিদুল ইসলাম,
- জাফলং বিট পুলিশের এএসআই মোবারক হোসেন,
- পুলিশ ও বিজিবির আরও সদস্যরা।
ইউএনও রতন কুমার অধিকারী বলেন,
“জাফলংয়ের জিরোপয়েন্ট থেকে কিছু দুষ্কৃতকারী রাতের অন্ধকারে ও বৃষ্টির মধ্যে পাথর সরানোর চেষ্টা করছিল। খবর পেয়ে দ্রুত অভিযান চালানো হয়। এখন ২৪ ঘণ্টা টহল জোরদার করা হয়েছে।”
কাউকে আটক করা যায়নি
অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ পাথর উদ্ধারের পরও এ ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাথর ব্যবসায়ীরা নতুন কৌশলে পাথর লুকাচ্ছেন, তবে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সাদাপাথর ও জাফলং—বাংলাদেশের দুটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। কিন্তু অবৈধভাবে পাথর লুটের ঘটনা এই এলাকাগুলোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশের জন্য বড় হুমকি। প্রশাসনের কঠোর অভিযানে সাময়িকভাবে পাথর উদ্ধার হলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই এলাকায় টেকসই সমাধানের জন্য নিয়মিত মনিটরিং, আইন প্রয়োগ এবং সচেতনতা কার্যক্রম বাড়ানো জরুরি।