বাংলা নিউজ স্টেশন | আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২৫, রবিবার

সিলেটের টাঙ্গুয়ার হাওরের শান্ত পানিতে আজ নামল এক গভীর শোকের ছায়া। পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভ্রমণে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে মাত্র পাঁচ বছরের এক শিশু। খেলতে খেলতে অসাবধানতাবশত হাউসবোট থেকে পানিতে পড়ে ডুবে যায় ছোট্ট মাসুম মিয়া, যে ছিল বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দুপুরের দিকে সিলেট শহরের শেখঘাট এলাকার বাসিন্দা কবির হোসেন তার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনসহ প্রায় ১৫-১৬ জন মিলে টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে বের হন। তারা “লালন তরী” নামের একটি হাউসবোটে চড়ে ছিলানী তাহিরপুর এলাকায় যাচ্ছিলেন। দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎই খেলতে খেলতে নৌকার জানালা দিয়ে পানিতে পড়ে যায় ছোট্ট মাসুম।
মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পুরো পরিবেশ ভয়ে, কান্নায় ভরে ওঠে। ছেলেকে বাঁচাতে মুহূর্তেই পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন তার বাবা। কিন্তু বিশাল হাওরের পানিতে শিশুটিকে আর খুঁজে পাননি তিনি।
ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই তাহিরপুর ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ এবং স্থানীয় ডুবুরি দল যৌথভাবে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। টানা চার ঘণ্টা ধরে জাল ফেলা ও পানির নিচে অনুসন্ধান চালানো হয়। অবশেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পানির গভীর থেকে ভেসে ওঠে ছোট্ট মাসুমের নিথর দেহ।
কান্নায় ভেঙে পড়ে পুরো পরিবার, চারদিকে শোকের মাতম। সবাইকে একমাত্র সন্তান হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যান বাবা-মা।
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন জানান—
“শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।”
টাঙ্গুয়ার হাওর শুধু পর্যটকদের স্বপ্নের জায়গাই নয়, বরং প্রকৃতির এক অনন্য সৌন্দর্যের ঠিকানা। প্রতিদিন শত শত মানুষ হাউসবোটে করে ভ্রমণে আসে। কিন্তু পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিটি বোটে শিশু ও পর্যটকদের জন্য অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
মাত্র পাঁচ বছরের শিশু মাসুম ছিল বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। সবার মুখে হাসি ফোটানো এই ছোট্ট ছেলেটির মৃত্যুতে সিলেটের শেখঘাট এলাকায় নেমে এসেছে গভীর শোক। প্রতিবেশীরাও বলছেন—
“ওর মতো চঞ্চল, হাসিখুশি বাচ্চা খুব কমই ছিল। এই শূন্যতা কেউ পূরণ করতে পারবে না।”
আজকের এই দুর্ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিল, আনন্দভ্রমণের মাঝেও নিরাপত্তার বিষয়টি অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই।