১৮ আগস্ট, ২০২৫

বাংলাদেশের সমাজে মেয়েদের বিয়ে নিয়ে শত বছরের প্রথা, সংস্কার ও কুসংস্কার চলে আসছে। বিয়ের জন্য অভিভাবকরা দেন-দরবার করেন, কাবিনের অঙ্ক ঠিক হয়, স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র, এমনকি বিলাসবহুল অনুষ্ঠানও আয়োজন করা হয়। কিন্তু এই পুরো প্রক্রিয়ায় যে একটি বিষয় সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত হয়, সেটি হলো—মেয়েটির নিজের পছন্দ, তার ইচ্ছা, তার ভালো লাগা-খারাপ লাগা।
আমরা প্রায়ই দেখি, অনেক মেয়েই জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত—বিয়ে—নিজের মতামত প্রকাশের আগেই সমাজ, পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের চাপে মেনে নিতে বাধ্য হয়। অথচ এটি শুধু অন্যায় নয়, এটি ইসলামের মূল শিক্ষার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।
ইসলামের দৃষ্টিতে মেয়েদের মতামতের গুরুত্ব
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যেখানে নারীর অধিকার অত্যন্ত স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
“কোনো নারীকে তার সম্মতি ছাড়া বিয়ে দেওয়া যাবে না।”
(সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
এমনকি, যদি কোনো মেয়ে লজ্জায় সরাসরি ‘হ্যাঁ’ বলতে না পারে, তার নীরবতাও সম্মতি হিসেবে গণ্য করা হয়। অর্থাৎ ইসলামে নারীর পছন্দ ও সম্মতি ছাড়া বিয়ে বৈধই নয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের সমাজে অনেক সময় এই শিক্ষা উপেক্ষা করা হয়।
সামাজিক বাস্তবতা
বাংলাদেশে অনেক পরিবারে এখনো মনে করা হয়, “মেয়েরা বুঝে কী? বাবা-মা যা ভালো মনে করেন, সেটাই মেয়ের জন্য ভালো।” এই ধারণা থেকেই মেয়েদের ইচ্ছা দমন করা হয়।
ফলাফল দাঁড়ায়—
- অনেক মেয়ে অচেনা একজনের সঙ্গে সংসার শুরু করতে বাধ্য হয়।
- সম্পর্কের শুরুতে ভালোবাসা না থাকায় দাম্পত্য জীবনে অশান্তি আসে।
- মানসিক স্বাস্থ্য নষ্ট হয়, অনেক সময় ডিপ্রেশনে ভোগে।
- এমনকি বিচ্ছেদ ও পারিবারিক ভাঙনের ঘটনাও ঘটে।
পরিবর্তনের প্রয়োজন
আমাদের সমাজে এখনই মানসিকতার পরিবর্তন দরকার।
- অভিভাবকদের বোঝা উচিত: সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবন তার নিজের, তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারও তার।
- মেয়েদের কণ্ঠস্বর শোনা উচিত: তারা কাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে চায়, সেই প্রশ্নটি সবচেয়ে আগে করা উচিত।
- সচেতন সমাজ গড়ে তোলা উচিত: ইসলামের শিক্ষা, মানবাধিকার ও ব্যক্তিস্বাধীনতা—সবকিছুর আলোকে মেয়েদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বিয়ে জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এখানে সাজসজ্জা, টাকা-পয়সা, কাবিন বা সামাজিক মর্যাদা কোনোটি মেয়ের সুখ নিশ্চিত করতে পারে না। আসল সুখ নির্ভর করে তার নিজের পছন্দ, সম্মতি ও ভালোবাসার ওপর।
যদি আমরা সত্যিই ইসলামের অনুসারী হতে চাই, তবে আমাদের সমাজে সেই শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে হবে। মেয়েদের ইচ্ছা ও সম্মতি ছাড়া কোনো বিয়ে যেন না হয়। তখনই আমরা বলতে পারব— “আমরা শুধু মেয়েদের বিয়ের আয়োজনই দিইনি, দিয়েছি তাদের নিজের মানুষ বেছে নেওয়ার অধিকারও।”