শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের বুনের বিভাগের কাদির নগর গ্রামে ঘটেছে এক হৃদয়বিদারক ট্র্যাজেডি। মালয়েশিয়া প্রবাসী নূর মোহাম্মদ দীর্ঘদিন পর বিয়ে করার জন্য দেশে ফিরেছিলেন। বিয়ের আনন্দ, সাজসজ্জা আর খুশিতে ভরে উঠেছিল পুরো বাড়ি। কিন্তু সেই আনন্দ মুহূর্তেই পরিণত হলো শোকে, যখন হঠাৎ ভয়াবহ বন্যায় ভেসে গেল তার পুরো পরিবার।
বিয়ের দুই দিন আগেই নূর মোহাম্মদ তার মা’র সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। তখনো তিনি বুঝতে পারেননি যে, এটাই হবে মায়ের সঙ্গে তার শেষ আলাপ। প্রলয়ংকরী বন্যায় তিনি হারালেন তার মা, ভাই-বোন, দাদা, চাচা, শিশু আত্মীয়সহ পরিবারের মোট ২৪ জন সদস্যকে।
রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভেঙে পড়া নূর মোহাম্মদ বলেন:
“আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না, মা কতটা খুশি ছিল। এখন সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আমার বাড়ি, দোকান, পরিবার—কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। শুধু ধ্বংসস্তূপ পড়ে আছে।”
প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে কাদির নগর গ্রামটি সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানির সঙ্গে নেমে আসা পাথরগুলো গ্রাম ও আশপাশের সবকিছু ধ্বংস করেছে। শত শত ঘরবাড়ি, বাজার, দোকান মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। শুধু নূর মোহাম্মদই নন, পুরো এলাকায় অন্তত ২০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
১৫ আগস্ট মালয়েশিয়া থেকে পাকিস্তানে ফেরেন নূর মোহাম্মদ। ইসলামাবাদ বিমানবন্দর থেকে বাড়িতে ফেরার সময়ও পরিবার তার বিয়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু সেদিনই তার জীবনের মোড় ঘুরে যায়। বিয়ের সাজের বদলে তাকে দাঁড়াতে হয় প্রিয়জনদের জানাজার মিছিলে।
সান্ত্বনা এটাই যে, বিমানবন্দর থেকে তাকে আনতে যাওয়ার কারণে তার বাবা ও আরেক ভাই বেঁচে গেছেন।
এই করুণ ঘটনাটি শুধু নূর মোহাম্মদের ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তন ও ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের একটি তীব্র উদাহরণ। বুনেরের মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে হারানো প্রিয়জনদের শোকে কাতর।