কেয়া পায়েলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তৌহিদ আফ্রিদির: চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করলেন তানভীর রাহী

শুক্রবার, ২৯ আগস্ট ২০২৫

ouhid afridi arrest keya payel relationshipa

আলোচিত-সমালোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও মাই টিভির মালিক নাসির উদ্দিন সাথীর ছেলে তৌহিদ আফ্রিদি বর্তমানে দেশের সবচেয়ে আলোচিত নাম। তাকে নিয়ে চারদিকে চলছে নানা বিতর্ক ও আলোচনা। গত ২৪ আগস্ট (রোববার) রাতে বরিশালে বিশেষ অভিযান চালিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে আদালতে হাজির করা হলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে সংঘটিত আসাদুল হক বাবু হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

তৌহিদ আফ্রিদি গ্রেপ্তারের পর থেকে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আসছে। বিশেষ করে তার ব্যক্তিগত জীবন, প্রেমঘটিত ঘটনা ও আন্দোলন চলাকালে তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে দেশজুড়ে চলছে তীব্র সমালোচনা।

গ্রেপ্তারের আগে থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে তৌহিদ আফ্রিদির বিভিন্ন অভিনেত্রী ও মডেলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের খবর। ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী প্রার্থনা ফারদিন দীঘির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বহুদিন ধরেই গুঞ্জন ছিল। যদিও এ বিষয়ে তিনি একাধিকবার জানিয়েছেন, দু’জনের মধ্যে কেবল বন্ধুত্ব ছাড়া আর কিছুই নেই।

তবে এবার নতুন করে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর তানভীর রাহী চ্যানেল 24-এর এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন— ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী কেয়া পায়েলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন তৌহিদ আফ্রিদি

তিনি বলেন,
“আমার মনে আছে, অনেক আগে এটা শুনেছিলাম। পায়েল আপুর সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। তবে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কখনো খুব বেশি জানতাম না। আসলে ওর মেয়েঘটিত ব্যাপারগুলো আমরা এড়িয়ে চলতাম।”

এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন করে ঝড় উঠেছে। নেটিজেনরা বলছেন, কনটেন্ট ক্রিয়েটরের ব্যক্তিগত জীবন বরাবরই বিতর্কিত ছিল এবং এবার তা আরও স্পষ্ট হলো।

Ad Page

শুধু প্রেম নয়, তৌহিদ আফ্রিদির বিরুদ্ধে আরও গুরুতর অভিযোগ এনেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নয়ন। সোমবার (২৫ আগস্ট) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শুনানির সময় তিনি জানান—

আন্দোলনের সময় তৌহিদ আফ্রিদি ছাত্রদের নগ্ন ভিডিও ধারণ করতেন।
এসব ভিডিও ব্যবহার করে তিনি আন্দোলনকারীদের ব্ল্যাকমেইল করতেন।
ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে তিনি ছাত্রসমাজকে বিভ্রান্ত করতেন এবং উসকানি দিতেন।

অ্যাডভোকেট নয়নের ভাষায়,
“একজন ইউটিউবার হয়েও তৌহিদ আফ্রিদি মিডিয়া সন্ত্রাস চালিয়েছেন। আন্দোলনকারীদের নগ্ন ভিডিও ধারণ করে জিম্মি করার মতো ভয়ংকর কাজ করেছেন। এ হত্যাকাণ্ডেও তার সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।”

সোমবার দুপুরে সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান আদালতে তৌহিদ আফ্রিদির সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। তবে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

অন্যদিকে, আফ্রিদির আইনজীবী খায়রুল ইসলাম জামিন আবেদন করে বলেন—
“আসামি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। তিনি লিভার রোগে ভুগছেন এবং ক্যান্সারে আক্রান্ত। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। বাদীও আদালতে শপথপত্র জমা দিয়েছেন যে, তথ্যগত ভুলের কারণে আফ্রিদির নাম মামলায় এসেছে।”

এ ঘটনায় তৌহিদ আফ্রিদির বাবা, মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীও আইনের জালে ধরা পড়েছেন। গত ১৭ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই মামলায় তাকে আদালতে হাজির করলে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ীতে নিহত হন ছাত্রনেতা মো. আসাদুল হক বাবু। এদিন দুপুর আড়াইটার দিকে আসামিদের গুলিতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন এবং পরে হাসপাতালে মারা যান।

এরপর নিহতের বাবা মো. জয়নাল আবেদীন যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলার ১১ নম্বর আসামি তৌহিদ আফ্রিদি এবং ২২ নম্বর আসামি নাসির উদ্দিন সাথী

সব মিলিয়ে বলা যায়, একসময় জনপ্রিয় ইউটিউবার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদির ক্যারিয়ার এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। একদিকে হত্যা মামলার আসামি হিসেবে রিমান্ডে, অন্যদিকে ব্যক্তিগত জীবনের একের পর এক কেলেঙ্কারি তার ভাবমূর্তি পুরোপুরি নষ্ট করেছে।

কেয়া পায়েলের সঙ্গে তার সম্পর্কের খবর, আন্দোলনের সময় নগ্ন ভিডিও ধারণের মতো ভয়ংকর অভিযোগ এবং বাবাসহ হত্যা মামলায় জড়ানো— সব মিলিয়ে তৌহিদ আফ্রিদি এখন দেশের সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *