৩১ আগস্ট ২০২৫, রবিবার

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে এক হৃদয়স্পর্শী ঘটনার জন্ম হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামল ও তার স্ত্রী সোনালী দেবী স্বেচ্ছায় তাদের তিন সন্তানসহ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। এ ঘটনা এলাকাজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং অনেকে এটিকে একটি অনুপ্রেরণামূলক অধ্যায় হিসেবে দেখছেন।
ধর্ম পরিবর্তনের প্রক্রিয়া
দম্পতিটি মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) কুমিল্লার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ইয়াসমিনের আদালতে ধর্ম পরিবর্তন সংক্রান্ত হলফনামা সম্পন্ন করেন। এর মাধ্যমে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেন।
এরপর বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা ওলামা মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি সাইয়েদ রাশীদুল হাসান জাহাঙ্গীর এর উপস্থিতিতে দম্পতি ও তাদের সন্তানরা কালেমা পাঠের মাধ্যমে শরিয়াহ মোতাবেক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
নতুন নামকরণ
ইসলাম গ্রহণের পর তাদের নতুন নামকরণ করা হয়েছে।
- শ্যামল দেব → মো. আবিদ উল্লাহ
- সোনালী দেবী → আরোহী জান্নাত
- মেয়ে মনিষা → তাসনিম জান্নাত
- মেয়ে তিশা → আরিশা জান্নাত
- ছেলে আয়ুস্মান → মোহাম্মদ আনাস
পরিবার ও পটভূমি
জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার গোপালনগর গ্রামের বাসিন্দা শ্যামল-সোনালী দম্পতি প্রায় ১০ বছর ধরে চৌদ্দগ্রাম বাজারস্থ জামে মসজিদ রোড এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন।
শ্যামলের একটি সেলুন ব্যবসা রয়েছে এলাকাতেই। পারিবারিকভাবে তারা হিন্দু ধর্মের অনুসারী হলেও মেয়ের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের প্রতি তাদের আগ্রহ জন্ম নেয়।
মেয়ের প্রভাব
তাদের বড় মেয়ে মনিষা জন্মগ্রহণ করে ৯ বছর আগে। ৩-৪ বছর বয়সে সে পাশের মক্তব, মসজিদ ও মাদরাসার শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতো। এভাবেই ধীরে ধীরে মনিষা কোরআনের কয়েকটি সূরা মুখস্থ করে ফেলে।
প্রতিদিন মেয়ের মুখে কোরআনের তেলাওয়াত শুনে শ্যামল-সোনালী দম্পতি গভীরভাবে প্রভাবিত হন। ধীরে ধীরে ইসলাম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তারা।
ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত
প্রায় দুই বছর আগে শ্যামল তার গ্রাহক কয়েকজন তরুণ মুসলিম ব্যবসায়ীর সাথে ইসলাম গ্রহণ নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। দীর্ঘ চিন্তাভাবনার পর, অবশেষে ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন।
স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
ইসলাম গ্রহণ অনুষ্ঠানে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, সাংবাদিক ও তরুণ ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ব্যক্তিরা দম্পতিকে অভিনন্দন জানান এবং মুসলিম সমাজে স্বাগত জানান।
আবিদ উল্লাহ (শ্যামল) বলেন:
“আমার ছোট মেয়ের মুখে কোরআনের তেলাওয়াত শোনার পর হৃদয়ে অন্যরকম অনুভূতি হয়েছিল। সেই অনুভূতিই আমাদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছে। আমি ও আমার পরিবার যেন সর্বদা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শ মেনে চলতে পারি, এজন্য সকলের দোয়া চাই।”
এ ঘটনা শুধু একটি ধর্মীয় রূপান্তর নয়, বরং এটি প্রমাণ করেছে কিভাবে শিশুদের সরলতা ও কোরআনের শিক্ষা মানুষের হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। স্থানীয়রা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে আরও অনেককে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করবে।