কুমিল্লায় মা-মেয়ের রহস্যজনক মৃত্যু, সিসিটিভি ফুটেজে গায়েব রেকর্ড

৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

cumilla mother daughter death 2025

কুমিল্লার নগরীর কালিয়াজুড়ি এলাকায় এক মর্মান্তিক ঘটনায় একই বাসা থেকে মা ও মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতরা হলেন তাহমিনা বেগম (৪০) এবং তার মেয়ে সুমাইয়া আফরিন (২২)। নিহত সুমাইয়া আফরিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। পুলিশ ধারণা করছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। ঘটনাটি ঘটেছে রোববার (৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫) মধ্যরাতে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত তাহমিনা বেগম তার সন্তানদের নিয়ে কালিয়াজুড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তার স্বামী নুরুল ইসলাম এক বছর আগে মারা যান। বড় ছেলে আলামিন আহমেদ ঢাকায় আইনজীবী হিসেবে কর্মরত। ছোট ছেলে ফয়সাল আহমেদ কুমিল্লা ইপিজেডে চাকরি করেন।

রাত ১১টার দিকে বড় ছেলে আলামিন বাসায় ফিরে দরজা খোলা অবস্থায় দেখতে পান। ভেতরে ঢুকে তিনি প্রথমে মা ও বোনকে খাটে শুয়ে থাকতে দেখেন। কোনো সাড়া না পেয়ে ছোট ভাই ফয়সালকে খবর দেন। পরে দুজন মিলে নিশ্চিত হন, তাহমিনা ও সুমাইয়া মারা গেছেন।

ঘটনার পর এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রোববার সকাল ৮টা ৮ মিনিটে মাথায় টুপি, পাঞ্জাবি-পায়জামা পরিহিত এক অজ্ঞাত ব্যক্তি ওই ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন। সকাল ১১টা ২২ মিনিটে তাকে একবার বের হতে দেখা যায়। তবে মাত্র ১২ মিনিট পর তিনি আবার ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর দুপুর ১টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত তাকে আর বের হতে দেখা যায়নি।

এ ঘটনায় স্থানীয়রা ধারণা করছেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি নিহত পরিবারের পরিচিত কেউ হতে পারেন। তবে ফুটেজের একটি নির্দিষ্ট সময়ের রেকর্ড রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে।

Ad Page

নিহতের ছেলে ফয়সাল জানান, তিনি শুক্রবার ঢাকায় গিয়েছিলেন স্ত্রীর কাছে। রোববার রাতে কুমিল্লায় ফিরে বারবার দরজায় কড়া নড়লেও সাড়া পাননি। ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়। ভেতরে গিয়ে মা ও বোনকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ৯৯৯-এ ফোন করেন।

কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মহিনুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাদের গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এটি হত্যা নাকি অন্য কোনো কারণে মৃত্যু—তা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে।

কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মিজানুর রহমান বলেন, “প্রাথমিকভাবে আলামতে হত্যাকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে। বিস্তারিত তদন্ত শেষে জানা যাবে।”

ঘটনার পর পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, নিহত মা-মেয়ে ছিলেন শান্ত স্বভাবের মানুষ। তাদের সঙ্গে কারো শত্রুতা ছিল বলে জানা যায়নি। ফলে হত্যার পেছনে অন্য কোনো জটিল কারণ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

এ ঘটনায় কুমিল্লা নগরীর কালিয়াজুড়ি এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, দ্রুতই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *