মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কুমিল্লায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন (২৩) ও তার মা তাহমিনা বেগমকে (৫২) হত্যার লোমহর্ষক রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। জিন তাড়ানোর জন্য ডেকে আনা কবিরাজ মোবারক হোসেনের হাতেই ঘটেছে এ নির্মম হত্যাকাণ্ড। সুমাইয়াকে ধর্ষণের চেষ্টা করতে গিয়ে বিষয়টি তার মা দেখে ফেলায় প্রথমে মাকে হত্যা করা হয়, পরে মেয়েকেও শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়।
ঘটনার পর থেকে রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করে একাধিক গোয়েন্দা ইউনিট। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকা থেকে মোবারককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) নাজির আহমেদ খান প্রেস ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
গ্রেপ্তারকৃত মোবারক হোসেন (২৯) নগরীর বাবুস সালাম জামে মসজিদের খাদেম ছিলেন। পাশাপাশি কবিরাজির মাধ্যমে ঝাড়ফুঁকের কাজ করতেন। নিহত তাহমিনা বেগম মাঝেমধ্যে ওই মসজিদের খতিবের কাছে যেতেন, সেখানেই পরিচয় হয় মোবারকের সঙ্গে। এক মাস ধরে তাদের বাসায় যাতায়াত ছিল তার।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে তাহমিনা বেগম জিন তাড়ানোর জন্য মেয়ের কক্ষে ডাকেন মোবারককে। একপর্যায়ে তিনি সুমাইয়াকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। বিষয়টি টের পেয়ে মা এগিয়ে গেলে প্রথমে মাকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেন। পরে মেয়েকেও শ্বাসরোধে হত্যা করে বাসায় থাকা চারটি মোবাইল ফোন ও একটি ল্যাপটপ নিয়ে পালিয়ে যান।
পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান জানান, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রোববার সকাল ৮টা ৮ মিনিটে মোবারক ওই বাসায় প্রবেশ করেন। ১১টা ২২ মিনিটে একবার বের হলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার ভেতরে ঢোকেন এবং দুপুর ১টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত আর বের হননি। এই সূত্র ধরে তাকে শনাক্ত করা হয়।
ঢাকায় পালানোর উদ্দেশ্যে রওনা দিলে কুমিল্লার বাগিচাগাঁও এলাকা থেকে সোমবার রাতে মোবারককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঘটনার পর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দোষীকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। রহস্য উদঘাটন ও মূল আসামি গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তারা অবরোধ তুলে নেন।
ধর্ষণ হয়েছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে পুলিশ সুপার বলেন, “এটি ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। আপাতত আমরা নিশ্চিত হয়েছি, হত্যাকাণ্ডটি মূলত একজনই সংঘটিত করেছেন।”
এদিকে নিহতদের বড় ছেলে ফয়সাল বাদী হয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। সোমবার বাদ মাগরিব কুমিল্লার সুজানগরের একটি মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে মা ও মেয়েকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
Pingback: ধর্ষণে বাধা দেওয়ায় কুবি ছাত্রী ও তার মা খুন - banglanewsstation.com