৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নেপালে চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫ (কাঠমান্ডু সময়), রাজধানী কাঠমান্ডুর দল্লু এলাকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঝলনাথ খানালের বাসায় আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এতে তার স্ত্রী রাজ্যলক্ষ্মী চিত্রকার অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিক্ষোভকারীরা বাসার ভেতরে তাকে আটকে রেখে ঘরবাড়িতে আগুন লাগায়। দগ্ধ অবস্থায় রাজ্যলক্ষ্মী চিত্রকারকে দ্রুত কির্তিপুর বার্ন হাসপাতালে নেওয়া হলেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর দেশজুড়ে উত্তেজনা আরও বেড়ে গেছে।
সরকার সম্প্রতি ফেসবুক, ইউটিউব ও এক্স (পূর্বের টুইটার) সহ কয়েকটি জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করে। এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে মূলত তরুণ প্রজন্মের (Gen Z) নেতৃত্বে বিক্ষোভ শুরু হয়।
বিক্ষোভকারীরা সরকারের স্বচ্ছতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধেও স্লোগান তোলে। তাদের অভিযোগ, “নেপো কিডস” নামে পরিচিত রাজনৈতিক নেতাদের সন্তানরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে, অথচ সাধারণ তরুণেরা বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়ছে।
এ পরিস্থিতিতে কাঠমান্ডুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ভারত তার নাগরিকদের আপাতত নেপাল ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে। দিল্লি থেকে কাঠমান্ডুর ফ্লাইট বাতিল করেছে এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো ও নেপাল এয়ারলাইন্স।
সোমবার রাতেই রাজধানীজুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি চালায়। সরকারি হিসাব অনুযায়ী অন্তত ১৯ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন এবং শতাধিক আহত হয়েছেন।
এ ঘটনার পর নেপালের প্রধানমন্ত্রী খাদগ প্রাসাদ শর্মা অলি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তার বাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয় নিরাপত্তা বাহিনী।
অলির অর্থমন্ত্রী বিশ্ণু প্রসাদ পাউডেল (৬৫)-কে রাস্তায় তাড়া করে গণপিটুনি দেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
অস্থির পরিস্থিতির কারণে ভারত সরকার তার নাগরিকদের নেপালে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে। দিল্লি থেকে কাঠমান্ডু পর্যন্ত এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো ও নেপাল এয়ারলাইন্সের সব ফ্লাইট মঙ্গলবার বাতিল করা হয়।
সরকার দাবি করেছিল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে নিবন্ধন করতে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। তবে সমালোচকরা বলছেন, মূলত সরকারবিরোধী মত দমন করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
যদিও সোমবার রাতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়, তবুও আন্দোলন থেমে যায়নি। বরং, নিহত বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুর ঘটনায় জনগণের ক্ষোভ আরও বেড়ে গেছে।