বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কুমিল্লার মুরাদনগরে ইভটিজিংয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বহিরাগত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের এই হামলায় আহত হয়েছেন বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকসহ অন্তত ১৫ জন। এ সময় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বহিরাগতদের দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকালে উপজেলার ধামঘর ইউনিয়নের পরমতলা শব্দর খান উচ্চ বিদ্যালয়ে এই ঘটনাটি ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ ওঠে একই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী বাকি বিল্লাহর বিরুদ্ধে। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ওই ছাত্রীর বড় ভাই ইমনসহ পাঁচজন বহিরাগত বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। তারা বাকি বিল্লাহকে খুঁজে না পেয়ে তার সহপাঠী শাহজালাল ও আরমানকে জোর করে বিদ্যালয়ের বাইরে নিয়ে গিয়ে মারধর করে।
এ সময় বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বাধা দিলে বহিরাগতরা তার ওপরও হামলা চালায়। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে বহিরাগত কিশোর গ্যাংয়ের ওপর হামলা চালায়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হন। তাদের মধ্যে সহকারী প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন এবং গণিত বিভাগের শিক্ষক জহিরুল ইসলামও রয়েছেন। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এসময় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বহিরাগতদের দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে বিদ্যালয়ের ভেতরেই আটকে রাখে।
বর পেয়ে মুরাদনগর থানা পুলিশ এবং মুরাদনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাকিব হাসান খান দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং আটক বহিরাগতদের থানায় নিয়ে যান।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহিদুর রহমান জানান—
“বিদ্যালয়ে প্রবেশ করা বহিরাগত ৫ জনকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরও ডাকা হয়েছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সহকারী প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন—
“ইভটিজিংয়ের কোনো অভিযোগ বিদ্যালয়ের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। অথচ মঙ্গলবার বিকেলেও এই বহিরাগতরা বিদ্যালয়ে এসে বাকি বিল্লাহকে তুলে নিতে চেয়েছিল। তখন আমরা তাদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা সেটি না করে বুধবার সকালে এসে হামলা চালিয়েছে।”
অন্যদিকে বিদ্যালয়ের সাবেক দাতা সদস্য শাহজাহান খান বাবুল বলেন—
“যদি সত্যিই ইভটিজিংয়ের ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে সেটি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিত ছিল। কিন্তু বিদ্যালয়ে ঢুকে টানাহেঁচড়া করে মারধর করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুর রহমান জানান—
“ঘটনার খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিয়েছে। যেহেতু এটি মোবাইল কোর্টের আওতায় আসে না, তাই থানাকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
মুরাদনগরের এ ঘটনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। ইভটিজিংয়ের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে যথাযথ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি উঠেছে। স্থানীয়রা মনে করছেন, বিদ্যালয়ের ভেতরে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও নিরাপত্তা দুটোই হুমকির মুখে পড়বে।