🗓️ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এক নজিরবিহীন কঠোর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে উত্তর কোরিয়া সরকার বিদেশি সিনেমা ও টিভি সিরিজ দেখার অপরাধে নাগরিকদের মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘ মানবাধিকার দফতরের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটি গত এক দশকে জনগণের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকার ভয়াবহভাবে সংকুচিত করেছে এবং প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি বাড়িয়ে নাগরিকদের প্রতিটি দিক নিয়ন্ত্রণ করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আধুনিক বিশ্বে কোনো জনগোষ্ঠীর ওপর এত কঠোর বিধিনিষেধ আগে আরোপ করা হয়নি। বিশেষ করে যারা বিদেশি কনটেন্ট দেখছে বা শেয়ার করছে, তাদের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছে দেশটির শাসকরা।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, “যদি এই দমন-পীড়ন চলতেই থাকে, তাহলে উত্তর কোরিয়ার জনগণ যেসব ভোগান্তি, নিষ্ঠুরতা ও ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তা আরও বেড়ে যাবে।”
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে দেশটি থেকে পালিয়ে আসা ৩০০ জনেরও বেশি নাগরিকের সাক্ষাৎকার নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, মৃত্যুদণ্ডের হার আগের তুলনায় বেড়ে গেছে এবং ২০১৫ সালের পর অন্তত ৬টি নতুন আইন চালু হয়েছে, যার মধ্যে বিদেশি সিনেমা বা টিভি সিরিজ দেখা ও শেয়ার করাও মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ হিসেবে ধরা হয়েছে।
২০১৯ সালের পর দেশটি থেকে পালিয়ে আসা একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ২০২০ সাল থেকে বিদেশি কনটেন্ট বিতরণের জন্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘটনা বেড়েছে। এসব মৃত্যুদণ্ড জনসমক্ষে গুলি করে কার্যকর করা হয়, যাতে জনগণের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
২০২৩ সালে পালিয়ে আসা উত্তর কোরিয়ান কাং গিউরি বলেন, তার তিন বন্ধু দক্ষিণ কোরিয়ার কনটেন্ট রাখার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড পান। তিনি নিজ চোখে দেখেছেন, ২৩ বছর বয়সী এক বন্ধুকে মাদকাসক্ত অপরাধীদের সঙ্গে একই বিচারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
তিনি জানান, “২০২০ সালের পর থেকে সবাই আরও বেশি আতঙ্কিত হয়ে গেছে। এখন এসব অপরাধকে রাষ্ট্র মাদক অপরাধের সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখে।”
২০১১ সালে কিম জং উন ক্ষমতায় আসার পর অনেকেই আশা করেছিলেন জনগণের জীবনযাত্রার উন্নতি হবে। তিনি বলেছিলেন, জনগণকে আর কষ্ট করে বাঁচতে হবে না—তাদের পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হবে।
তবে ২০১৯ সালে পশ্চিমা বিশ্ব ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে যখন তিনি পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির দিকে জোর দেন, তখন থেকেই নাগরিকদের জীবনযাত্রা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় বলে জাতিসংঘ জানায়।
২০১৮ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে পালিয়ে আসা এক তরুণী বলেন, “শাসনের প্রথমদিকে কিছু আশা ছিল, কিন্তু তা বেশিদিন টেকেনি। সরকার ধীরে ধীরে মানুষের স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করার পথ বন্ধ করে দেয়, আর প্রতিদিন বেঁচে থাকাটাই এক যন্ত্রণায় পরিণত হয়।”
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে উত্তর কোরিয়ার সরকার জনগণের ওপর প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। এর ফলে তারা নিজেদের অর্থনৈতিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।
উন্নত নজরদারি প্রযুক্তি এই দমন-পীড়নকে আরও সহজ করে তুলেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।