প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রাজধানীর ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির ভাটারা থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত নারী ফারহানা হক লুসি, যিনি একসময় বিতর্কিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান **ইভ্যালি**তে কর্মরত ছিলেন।
পুলিশ জানায়, লুসি ইভ্যালি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর একই ধাঁচে একটি নতুন প্রতারণামূলক ব্যবসা শুরু করেন। তিনি “Facebook”-এ “প্রিটি পেইজ” নামের একটি পেইজ খুলে কম দামে গ্যাজেট সরবরাহের প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করেন।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই পেইজের মাধ্যমে লুসি ও তার স্বামী মিলে প্রায় ১৫–২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পেইজে প্রচার করা হতো যে, এখানে কম দামে iPhone, **iPad**সহ নানা দামী গ্যাজেট অর্ডার দেওয়া যায়। অনেকেই সেই লোভে পড়ে অগ্রিম টাকা দিয়ে অর্ডার করতেন।
গ্রাহকরা জানায়, শুরুতে কয়েকজনকে পণ্য দিয়ে ইতিবাচক রিভিউ সংগ্রহ করা হতো। এতে অন্যরা আস্থা পেয়ে আরও অর্ডার দিতে শুরু করেন। লুসি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, এটি ছিল প্রি-অর্ডার ভিত্তিক ব্যবসা, যেখানে গ্রাহকদের পূর্ণ অগ্রিম টাকা দিতে হতো এবং ২–৩ মাস পর পণ্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কিন্তু সময়মতো কোনো পণ্য সরবরাহ না করে তারা টাকা আত্মসাৎ করেন।
পুলিশ জানায়, লুসির মূল টার্গেট ছিল নারী গ্রাহকরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের আকৃষ্ট করতে নানা কৌশলে বিজ্ঞাপন দিতো তারা। অনেক নারী এই বিশ্বাসে অর্ডার দিয়ে বড় অঙ্কের টাকা হারিয়েছেন।
ভাটারা থানার অফিসার ইনচার্জ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে অভিযান চালিয়ে লুসিকে মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে একাধিক প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, লুসি ও তার স্বামী প্রথমে ইভ্যালিতে চাকরি করতেন। ইভ্যালি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তারা একই কায়দায় নতুন ব্যবসা শুরু করেন। ইভ্যালির মতো প্রি-অর্ডার ভিত্তিক সিস্টেম ব্যবহার করে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করে পরে টাকা আত্মসাৎ করাই ছিল তাদের প্রধান কৌশল।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিকভাবে গ্রাহকদের দেওয়া ১৫–২০ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। বিষয়টি আরও তদন্তাধীন।
পুলিশ সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অজানা পেইজ থেকে কেনাকাটা করার আগে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে। অগ্রিম টাকা পাঠানোর আগে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করা অত্যন্ত জরুরি।