প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার শেরপুর গ্রামের এক হৃদয়বিদারক ঘটনা এখন এলাকায় শোকের ছায়া ফেলেছে। গ্রামেরই সন্তান আশরাফুল আল-আমীন (৩০) দীর্ঘদিন বিদেশে পড়াশোনা ও পরিশ্রমের পর সংসার গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছিলেন। পরিবারের স্বপ্ন ছিল, এ মাসেই তিনি নববধূকে ঘরে তুলবেন। কিন্তু সে স্বপ্ন অপূর্ণ রেখেই কফিনে দেশে ফিরলেন তিনি।
গত ২৯ জুলাই চীন এর নানজিং শহরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন আল-আমীন। এক বন্ধুকে বিদায় জানাতে মোটরসাইকেলে করে বিমানবন্দরের পথে যাওয়ার সময় পেছন থেকে আসা একটি গাড়ি তাদের ধাক্কা দেয়। বন্ধুর পেছনে বসা অবস্থায় সড়কে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। হাসপাতালে টানা ১১ দিন আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর ৯ আগস্ট তার মৃত্যু হয়।
সোমবার ভোরে ঢাকা বিমানবন্দর হয়ে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায় তার মরদেহ। গ্রামে নামার পরপরই কান্নার রোল পড়ে যায় চারদিকে। বাড়ির আঙিনায় ফ্রিজিং ভ্যানে রাখা লাশ দেখতে ভিড় করেন আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী। মাকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিল, আর নববধূ বুক চাপড়ে বলছিলেন—“এখন আমার কী হবে?”
আল-আমীন ছিলেন কৃষক গিয়াস উদ্দিন এর বড় ছেলে। ছোট ভাই শামীম আহম্মদ জানালেন, অনেক কষ্টে ভাইকে পড়াশোনার সুযোগ করে দিয়েছিলেন তারা। ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা শেষ করে প্রায় সাত বছর আগে উচ্চশিক্ষার জন্য চীন যান আল-আমীন। নানজিং টিচার্স ইউনিভার্সিটি থেকে ফার্মেসিতে স্নাতক সম্পন্ন করে কর্মজীবন শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
২০২৪ সালের ১৪ জুলাই দেশে এসে বিয়ে করেন এবং মাত্র তিন দিন থেকে চীনে ফিরে যান। পরবর্তীতে আবারও ছুটি নিয়ে আট মাস আগে দেশে এসে শ্বশুরবাড়ি ও মা-বাবার সঙ্গে সময় কাটান। চলতি মাসের শুরুতেই দেশে ফিরে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে নববধূকে ঘরে তোলার কথা ছিল তার।
গ্রামবাসীর চোখে আল-আমীন ছিলেন একজন ভদ্র, পরিশ্রমী ও স্বপ্নবাজ তরুণ। তার মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বিকেলে বাড়ির পাশে জানাজা শেষে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
আল-আমীনের মতো হাজারো তরুণ বিদেশে গিয়ে স্বপ্ন খোঁজেন, পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। কিন্তু অনেক সময় সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই থেমে যায় জীবন। এই মর্মান্তিক ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিল, জীবনের অনিশ্চয়তা কতটা নির্মম হতে পারে।