শনিবার, ৩০ আগস্ট ২০২৫

শনিবার (৩০ আগস্ট ২০২৫) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে টাঙ্গাইল শহরের থানার পাশে অবস্থিত জাতীয় পার্টির জেলা কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালান গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জাতীয় পার্টি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলার প্রতিবাদে সকাল ১১টার দিকে জেলা গণঅধিকার পরিষদের উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।
বিক্ষোভের সূচনা ও উত্তেজনা বৃদ্ধি
মিছিলটি নিরালা মোড় থেকে শুরু হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানার পাশ দিয়ে অগ্রসর হয়। মিছিলকারীদের নেতৃত্ব দেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। এতে শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন। বিক্ষোভ মিছিলটি জেলা জাতীয় পার্টির অফিসের সামনে পৌঁছালে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। মুহূর্তের মধ্যেই নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে দিতে অফিসের সামনে জড়ো হন এবং পরে ভাঙচুর শুরু করেন।
অফিস ভাঙচুরের ঘটনা
প্রথমে অফিসের জানালা ও দরজার কাচ ভাঙচুর করা হয়। পরে নেতাকর্মীরা অফিসের ভেতরে প্রবেশ করে চেয়ার ও অন্যান্য আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুরো ঘটনায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয় স্থানীয়দের মধ্যে। অফিসের আশেপাশের দোকানপাটও তখন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
পুলিশের ভূমিকা
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর হাসান সাংবাদিকদের জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে। তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে পুরো এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত আছি।”
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় রাজনীতিকরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের মধ্যে বিরোধ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। নুরুল হক নুর ও তাঁর অনুসারীরা দাবি করছেন, জাতীয় পার্টির নেতাদের পক্ষ থেকে একাধিকবার তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এর প্রতিবাদেই এদিনের বিক্ষোভে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতারা এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, “এটি একটি পরিকল্পিত হামলা। আমাদের দলকে দুর্বল করার জন্যই এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে।”
জনমনে উদ্বেগ
ঘটনার পর স্থানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে বলছেন, রাজনৈতিক সহিংসতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর প্রভাব সাধারণ মানুষের জীবনে পড়ছে। শহরের ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এ ধরনের সংঘর্ষ ও ভাঙচুর চলতে থাকলে স্থানীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে এ ধরনের সহিংসতা দেশে আরও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সহনশীলতার সংস্কৃতি গড়ে তোলা জরুরি।
শনিবার টাঙ্গাইলে জাতীয় পার্টির অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করেছে যে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সহিংসতার জায়গা এখনও অনেক বড়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখলেও জনমনে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। আসন্ন দিনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত না হলে আরও বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।