তারিখ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভোলা জেলা আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে এক ভয়াবহ পিতৃহত্যার ঘটনায়। অতিরিক্ত শাসনের জেরে ক্ষুব্ধ হয়ে নিজের বাবাকে ছুরি দিয়ে হত্যা করেছে রেদোয়ানুল হক নামের এক যুবক। নিহত বাবা ছিলেন দারুল হাদিস কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস এবং উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদর খতিব — সম্মানিত আলেম আমিনুল হক নোমানী।
শনিবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ শরীফুল হক নামের ভোলা পুলিশ সুপার জানান, রেদোয়ান মানসিকভাবে অস্থির হয়ে পড়েছিল এবং বাবার কঠোর শাসনের কারণে ক্ষোভ জমেছিল তার মধ্যে। দুই মাস আগে সে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিল এবং ব্যর্থ হওয়ার পর তাকে তজুমদ্দিন উপজেলার খাসেরহাট এলাকায় মামাবাড়িতে পাঠানো হয়।
এরই মধ্যে বিভিন্ন সিনেমা দেখে বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে রেদোয়ান। ২ সেপ্টেম্বর অনলাইনে একটি ধারালো ছুরি অর্ডার করে এবং ৫ সেপ্টেম্বর তা হাতে পায়।
৬ সেপ্টেম্বর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মামাবাড়ি থেকে কালো শার্ট, ঘড়ি ও ক্যাপ পরে ভোলায় আসে সে। রাতে এশার নামাজ শেষে বাড়িতে ফেরার পর রাত ৯টার দিকে বাবার ওপর ছুরি নিয়ে হামলা চালায়। প্রথম আঘাতে বাবা ছুরি ধরে ফেললেও রেদোয়ান থামেনি। সিনেমায় শেখা কৌশলে বুকে, পেটে ও ঘাড়ে আঘাত করে নিশ্চিত করে তার বাবার মৃত্যু।
চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে এলে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায় রেদোয়ান। যাওয়ার সময় ঘরের পেছনের খালে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটি ফেলে দিয়ে রক্তমাখা জামা নিয়েই অটোরিকশায় শহরের খলিফাপট্টি জামে মসজিদে গিয়ে জামা পরিষ্কার করে এবং পরে সিএনজিতে মামাবাড়িতে ফিরে যায়।
চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো — ৭ সেপ্টেম্বর নিহত বাবার জানাজায় উপস্থিত থেকে সে খুনিদের ফাঁসির দাবি জানায় এবং আবেগহীন স্বরে জোড়ালো বক্তব্য দেয়। অথচ সে-ই ছিল প্রকৃত খুনি।
ভোলা পুলিশ জানায়, নিহত আমিনুল হকের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে রেদোয়ানুল বড়। মানসিক বিকৃতি ও অতিরিক্ত শাসনের কারণে পিতৃহত্যার মতো ভয়ানক অপরাধে জড়িয়ে পড়ে সে।
এই হত্যাকাণ্ডে জেলাজুড়ে শোক ও আতঙ্ক নেমে এসেছে। পুলিশ রেদোয়ানকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন।