১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বরিশালে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন কবির হোসেন পাটোয়ারী—বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) হিসেবে দায়িত্ব পালনরত এই সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একাধিক নারীর সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি অন্তত ১৭ জন নারীকে বিয়ে করেছেন, যার মধ্যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন জেলার নারীরা রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বরিশাল নগরীর কাশিপুর বন সংরক্ষক কার্যালয়ের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগী নারীরা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে নারীরা জানান, বিদেশে পড়াশোনার সুযোগ, সরকারি চাকরি, বিমানবালা হিসেবে নিয়োগ কিংবা সম্পত্তি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কবির তাদের বিয়ে করতেন এবং বিয়ের অল্পদিনের মধ্যেই যৌতুক দাবি করতেন। যৌতুক না দিলে শুরু হতো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
ভুক্তভোগী নারীরা জানান, কবির হোসেন চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার বাসিন্দা। চাকরিসূত্রে তিনি বিভিন্ন জেলায় কর্মরত ছিলেন এবং প্রতিটি স্টেশনেই নতুন করে বিয়ে করতেন। ঢাকার নাজনিন আক্তার শীলা, নারায়ণগঞ্জের সোনিয়া, খুলনার নাসরিন আক্তার দোলনসহ আরও অনেকেই তার প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
সর্বশেষ চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি খুলনার চাকরিজীবী খাদিজা আক্তারকে বিয়ে করেন কবির। কিন্তু বিয়ের দ্বিতীয় দিনেই তিনি স্ত্রীর বাবার বাড়ির অংশ লিখে দেওয়ার দাবি করেন। এতে রাজি না হওয়ায় খাদিজাকে বরিশালের সরকারি বাসভবন থেকে বের করে দেন বলে অভিযোগ। খাদিজা বলেন, “আমাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে কবির বিয়ে করেছেন। পরে বাবার বাড়ির সম্পত্তি লিখে না দেওয়ায় তিনি আমাকে নির্যাতন করে বের করে দিয়েছেন।”
অন্য এক ভুক্তভোগী নাসরিন আক্তার বলেন, “আমাকেও প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেন কবির। পরে তার বিয়ের নাটক ফাঁস হয়ে গেলে আমাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।” তিনি আরও বলেন, “যত স্টেশনে কবির চাকরি করেছেন, প্রায় প্রতিটিতেই বিয়ে করেছেন এবং পরে তাদের খোঁজও নেন না। আমরা যতদূর খোঁজ নিয়েছি, বর্তমানে তার ১৭ জন স্ত্রী রয়েছে এবং তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।”
মানববন্ধনে উপস্থিত নারীরা অভিযোগ করেন, থানায়, আদালতে এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দায়ের করেও কোনো প্রতিকার পাননি তারা। এমনকি একবার দাপ্তরিক প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার হলেও প্রভাবশালীদের সহায়তায় দ্রুত জামিনে মুক্তি পান কবির। তারা দাবি করেন, তাকে বন বিভাগ থেকে অপসারণ করে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
এ বিষয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন বলেন, “বন কর্মকর্তার প্রতারণার মাধ্যমে একাধিক বিয়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অভিযুক্ত কবির হোসেন পাটোয়ারীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে তার আইনজীবী এনায়েত হোসেন বাচ্চু দাবি করেছেন, “আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন।”