প্রকাশিত : রবিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও হাটহাজারী এলাকায় আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় লোকজন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
রবিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় একাধিকবার সংঘর্ষের পর এ সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হাটহাজারী পৌর এলাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ১০ কিলোমিটার এলাকায় রবিবার বিকেল ৩টা থেকে সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বহাল থাকবে।
এই সময়ে কোনো প্রকার সভা-সমাবেশ, মিছিল, বিক্ষোভ, শোভাযাত্রা, অস্ত্র বহন, পাঁচজনের বেশি মানুষের জমায়েত—সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. কামরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জননিরাপত্তা রক্ষা ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের সূত্রপাত
শুক্রবারের সংঘর্ষের জেরে রোববার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেন। পরে জিরো পয়েন্ট এলাকায় তারা বিক্ষোভ শুরু করেন এবং হামলায় জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবি করেন।
একপর্যায়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীর ওপর পুনরায় হামলার খবর পেয়ে তারা ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় গেলে স্থানীয় লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে এগিয়ে আসে। মুহূর্তেই উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন, রেজিস্ট্রারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও স্থানীয়রা তা উপেক্ষা করে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু করে।
হামলা ও আহতদের তালিকা
সংঘর্ষের সময় প্রো-ভিসি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে। এছাড়া প্রক্টর মোহাম্মদ তানভীর হায়দার আরিফসহ অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
বহু শিক্ষার্থী রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।
নারী শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনা থেকেই মূল সংঘাত
এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় মূলত একটি নারী শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন একটি বাসার দারোয়ান কর্তৃক মারধরের ঘটনায়। শিক্ষার্থীরা দারোয়ানের শাস্তি দাবি করলে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উত্তেজনায় রূপ নেয়।
এর জের ধরেই শুক্রবার ও রবিবার টানা দুইদিন শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
প্রশাসনের পদক্ষেপ
রবিবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেন প্রো-ভিসি ড. মো. কামাল উদ্দিন। তবে ক্লাস যথারীতি চলবে বলে জানান তিনি।
শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে শাটল ট্রেন নিয়মিত সূচি অনুযায়ী চলবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থী-স্থানীয়দের সংঘর্ষ ও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা জারি সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাগুলোর একটি। শিক্ষার্থীরা হামলার বিচার ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দাবি করেছেন, অন্যদিকে স্থানীয়রা ভিন্ন দাবি তুলে ধরছে। পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা এখন দেখার বিষয়।