চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী-স্থানীয়দের সংঘর্ষ, আহত শতাধিক

রবিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৫

slide1

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে রোববার গভীর রাতে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন এলাকায় এক ছাত্রীকে মারধরের জেরে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করলে ভোরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রী তাঁর ভাড়া করা বাসায় প্রবেশ করতে গেলে ভবনের দারোয়ান দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানান। ছাত্রীটি জানান, তিনি সময়মতো বাসায় ফিরলেও দারোয়ান অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং একপর্যায়ে তাঁকে চড়-থাপ্পড় মারেন। ছাত্রীটি আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে দারোয়ান তাঁকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন এবং লাথি মারেন।

Ad Page

এ সময় তাঁর রুমমেট ও আশপাশের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এলে দারোয়ান পালিয়ে যান। ঘটনাটি জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেটে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা দারোয়ানকে ধরতে গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।

বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক মুহাম্মদ টিপু সুলতান জানান, ওই রাতে অন্তত ২৩ জন গুরুতর আহত শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাঁর মতে, মোট আহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা একশোরও বেশি। এত শিক্ষার্থী আসায় সবার নাম রেজিস্ট্রারে তোলা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা আল মাসনূন সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন। সংগঠনের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মুখ্য সংগঠক সাব্বির হোসেন বলেন, মাসনূনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে এবং তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর কোরবান আলী ও নাজমুল হোসাইনসহ পুলিশ সদস্যরা রাত পৌনে ১টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তবে স্থানীয়দের অবরোধের কারণে তাঁরা ভেতরে ঢুকতে পারেননি। পরে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

রাত সাড়ে ৩টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে প্রবেশ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ভোর ৫টার দিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর শাহরিয়ার বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ২ নম্বর গেটের ভেতর থেকে ১০ জন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেছি। আমাদের আরেকটি টিম ভেতরে অবস্থান করছে। সকালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

সহকারী প্রক্টর নুরুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ক্যাম্পাসে না থাকলেও প্রক্টরিয়াল টিমের দুই সদস্য আহত হয়েছেন। সেনাবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে আসায় বড় ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানো গেছে।

সামগ্রিক ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগ করেন। অনেকের দাবি, স্থানীয়দের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে টানাপোড়েন চলছিল। এবারের ঘটনায় তা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকার মধ্যে সম্পর্ক পুনর্গঠন জরুরি। অন্যথায় ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আরও বাড়তে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *