মঙ্গলবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মানিকগঞ্জে ঘটেছে মর্মান্তিক এক ঘটনা। প্রবাসীর স্ত্রী ও দুই সন্তানের নিথর দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার) দুপুরে পৌরসভার পশ্চিম বান্দুটিয়া এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
মরদেহ উদ্ধার অভিযান
পুলিশ জানিয়েছে, নিহতরা হলেন— মালয়েশিয়া প্রবাসী শাহিন দেওয়ানের স্ত্রী শেখা আক্তার (২৯), তার ছেলে আলভী (১১) এবং মেয়ে সাইফা (২)। দুপুরে দীর্ঘ সময় ধরে ঘরের ভেতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে স্থানীয়রা সন্দেহ করেন। পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া আলমগীর প্রথমে বিদ্যুতের বিল দিতে এসে দরজায় ডাকাডাকি করলেও কোনো সাড়া পাননি। পরে বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলে তিনি জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করেন।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে। এ সময় ঘরের ভেতরে তিনজনের নিথর দেহ দেখতে পান তারা। তাৎক্ষণিকভাবে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
পারিবারিক কলহের ইঙ্গিত
মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার ইয়াসমিন খাতুন জানান, গত মাসেই শেখা আক্তার পশ্চিম বান্দুটিয়ার ওই ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন। তিনি প্রবাসী শাহিন দেওয়ানের দ্বিতীয় স্ত্রী। নিহত শিশু আলভী তার আগের স্ত্রীর সন্তান হলেও শেখা আক্তারের সঙ্গে বসবাস করত।
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, পারিবারিক কলহ ও মানসিক অশান্তির কারণে শেখা আক্তার আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি বিষপান করেছেন এবং তার দুই সন্তানকেও একইভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেন। তবে প্রকৃত ঘটনা তদন্তের পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর পশ্চিম বান্দুটিয়া এলাকায় নেমে এসেছে গভীর শোক। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, শেখা আক্তার ছিলেন শান্ত স্বভাবের মানুষ। তবে মাঝে মাঝেই তাকে চিন্তিত ও অস্থির দেখা যেত।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে তার সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে তিনি প্রায়ই দুশ্চিন্তায় ভুগতেন। তবে এমন ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নেবেন তা কেউ কল্পনাও করেনি।
মরদেহ মর্গে, তদন্ত অব্যাহত
পুলিশ মরদেহ তিনটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং প্রবাসী স্বামী শাহিন দেওয়ানকেও এ ঘটনার বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।
মানিকগঞ্জের এ মর্মান্তিক ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, প্রবাসী জীবনের টানাপোড়েন এবং পারিবারিক দ্বন্দ্ব কতটা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তদন্তের পর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তবে আপাতত একটি পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে এবং এলাকাবাসী গভীর শোকে মুহ্যমান।