শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫

ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত
বিদেশে স্বপ্নের দেশ ইতালি যাওয়ার আশায় লিবিয়ায় গিয়েছিলেন কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার মানিকদী পূর্বকান্দা গ্রামের তরুণ দিপু মিয়া (২১)। স্থানীয় এক দালাল পরিবার থেকে নিয়েছিলেন সাড়ে ৯ লাখ টাকা। প্রতিশ্রুতি ছিল সাগরপথে নিরাপদে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি আর পূরণ হয়নি। কেটে গেছে দীর্ঘ ১ বছর ১০ মাস। আজও দিপু বন্দি হয়ে আছেন লিবিয়ার দালাল ও মাফিয়া চক্রের আস্তানায়।
পরিবার জানায়, দিপুর ওপর নিয়মিত চালানো হচ্ছে অমানবিক নির্যাতন। কাপড় দিয়ে মুখ বেঁধে বেধড়ক পেটানো হয়, আর সেই দৃশ্য ভিডিও কলে দেখানো হয় দেশে থাকা স্বজনদের। চক্রটির মূল লক্ষ্য একটাই—টাকা আদায়। পরিবার টাকা পাঠালে কিছুদিনের জন্য নির্যাতন বন্ধ থাকে, এরপর আবার শুরু হয় নতুন করে।
স্বজনদের দাবি, ইতালি পাঠানোর নামে দালাল চক্র ইতোমধ্যে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এখন আবার দাবি করা হচ্ছে নতুন করে ২৫ লাখ টাকা। কিন্তু পরিবার জানিয়ে দিয়েছে, আর টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই।
ঘটনার পেছনের টাইমলাইন
- ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ → লিবিয়ায় পৌঁছান দিপু। কয়েকদিন পর আটক হন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে এবং পরে মাফিয়া চক্রের হাতে চলে যান।
- প্রথম দফায় মুক্তি → দেড় মাস পর ভিডিও কলে পরিবারের কাছে নির্যাতনের দৃশ্য দেখিয়ে একদিনের মধ্যে ১১ লাখ টাকা দাবি করা হয়। পরিবার টাকা পাঠালে মুক্তি পান।
- এরপর দালাল ফজলুল হকের নিয়ন্ত্রণে থাকেন চার মাস। আবার টাকা চাওয়া হয়, দেওয়া হয় ১০ লাখ টাকা। নৌকায় ওঠানো হলেও মাঝপথে ফেরত আনা হয়।
- দ্বিতীয়বার আবার নতুন করে ৯ লাখ টাকা দাবি করা হয়। টাকা দেওয়ার পর আলবেনিয়ার কাছে গিয়ে এক চক্রের হাতে আটক হন দিপু। পরিবার ৫ লাখ টাকা পাঠানোর পর ছাড়া পান।
- দীর্ঘদিন শান্ত থাকার পর চলতি বছরের ১৫ জুলাই আবারও দালাল ফজলু সাড়ে ৮ লাখ টাকা দাবি করেন। পরিবার অস্বীকৃতি জানালে ১৬ জুলাই দিপুকে তুলে নিয়ে যায় আরেকটি চক্র।
- ২৪ জুলাই থেকে ভিডিও কলে আবারও নির্যাতনের দৃশ্য পাঠানো শুরু হয়। মুক্তি পেতে হলে দিতে হবে ২৫ লাখ টাকা।
স্বজনরা জানান, তারা নিঃস্ব হয়ে গেছেন। এত টাকা দেওয়ার পরও নির্যাতন বন্ধ হয়নি।
স্থানীয়রা দালাল ফজলুল হকের দোতলা বাড়ির সামনে গিয়ে দেখেন, গেট তালাবদ্ধ। তার ছোট বোন বলেন, “ভাই বিদেশে আছেন। তবে দিপুকে মুক্ত করতে তিনি চেষ্টা করছেন।”
বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শবনম শারমিনের নজরে আনা হলে তিনি নির্যাতনের ভিডিও দেখে জানান, প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নিয়ে শিগগির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
দিপুর পরিবারের আর্তনাদ একটাই—“আমাদের ছেলেটিকে ফিরিয়ে দিন, আর নয় টাকা দাবী।”