রাজশাহী পবার মিনারুলের আত্মহত্যার চল্লিশাতেও লাখ টাকার ঋণ

তারিখ: সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ (৩১শে ভাদ্র ১৪৩২)

minarul chollisha debt rajshahi

রাজশাহীর পবা উপজেলার বামনশিকড় গ্রামএ ঘটেছিল এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। ঋণের চাপ ও অভাবের কারণে স্ত্রী-সন্তানদের হত্যার পর আত্মহত্যা করেছিলেন মিনারুল ইসলাম (৩৫)। আজ সোমবার তাদের মৃত্যুর চল্লিশা অনুষ্ঠানে আবারও নতুন করে লাখ টাকার ঋণের বোঝা গুনতে হচ্ছে তার বৃদ্ধ পিতা রুস্তম আলীকে।

গত ১৪ আগস্ট দিবাগত রাতে মিনারুল তার স্ত্রী মনিরা খাতুন (৩০), ছেলে মাহিম (১৪) ও মেয়ে মিথিলা (৩)-কে হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুটে লিখে গিয়েছিলেন, “আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে।”

আজ সেই পরিবারের চল্লিশা আয়োজন করেন রুস্তম আলী — তাও আবার ধার-দেনা করে। গ্রামের বাড়ির সামনে ও পেছনে দুটি প্যান্ডেল দিয়ে অতিথিদের বসার ব্যবস্থা করা হয়। দুপুরে ভাত, ডাল ও মাছ দিয়ে মুড়িঘণ্ট পরিবেশন করা হয়। ভ্যানে করে আত্মীয়স্বজন ও দূরের গ্রামের মানুষজন অনুষ্ঠানে আসেন।

Ad Page

রুস্তম আলী জানান, “এই অনুষ্ঠানকে কেউ বলে চল্লিশা, কেউ বলে ফয়তা। বাপ-দাদার আমল থেকেই দেখে আসছি। সমাজের মানুষ ও আত্মীয়-স্বজনকে নিয়ে এটা করতে হয়। আমি গরিব মানুষ, তাই মাংস করতে পারিনি। শুধু মাছ দিয়ে মুড়িঘণ্ট আর ডাল করেছি। আশপাশের মানুষ বলছিল চারজন মরার কারণে বাড়িটা ভারী লাগছিল, ছোট ছেলেপিলেরা ভয় পাচ্ছিল। তাই অনুষ্ঠানটা করলাম, যাতে ভয় ভাঙে। খাওয়াদাওয়ায় প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হলো।”

তিনি আরও বলেন, “সবই ধারদেনায় হয়েছে। আমার তো জমানো টাকা নাই। ১৫-১৬ কাঠা জমি আছে। এক কাঠা বেচে এই ঋণ শোধ করব।”

এ বিষয়ে সাঈদ আলী মুর্শেদ নামের পারিলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, “চল্লিশার আয়োজনের কথা শুনেছি। ইসলামের দৃষ্টিতে এর কোনো ভিত্তি নেই। তবে এ এলাকার রেওয়াজ হিসেবেই অনেকে করে থাকে।”

গ্রামবাসীরা বলছেন, একদিকে চারটি প্রাণ হারানোর বেদনা, অন্যদিকে চল্লিশা পালনের সামাজিক চাপ — এই দুইয়ের মাঝখানে পড়ে আবারও ঋণের বোঝা বইতে হচ্ছে মিনারুলের দরিদ্র পরিবারকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *