শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র অরিত্র হাসান ৭ জুলাই সকালে বন্ধুদের সঙ্গে কক্সবাজারের হিমছড়ি সৈকতে ঘুরতে গিয়েছিলেন। ফুরফুরে মন নিয়ে সাগরের বালুকায় পা রেখেছিলেন তিনি ও তার তিন বন্ধু। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে স্রোতের ঘূর্ণিতে তারা ভেসে যান। অল্প সময়ের মধ্যেই সাদমান ও আসিফের লাশ উদ্ধার করা হয়, কিন্তু অরিত্র এখনও নিখোঁজ।
দীর্ঘ ৪৩ দিন পার হলেও অরিত্রের কোনো সন্ধান মেলেনি। অসহায় বাবা-মা প্রতিদিন কক্সবাজারের সমুদ্রপাড়ে দাঁড়িয়ে সন্তানের ফেরার অপেক্ষায় কাঁদছেন।
অরিত্রের মা জেসমিন আক্তার বলেন—
“আমার ছেলে যেখানে হারিয়েছে জীবন, আমি সেই সাগরকেই মায়ের কোলে মনে করি। প্রতিদিন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, যেন সে ফিরে আসে।”
বাবা সাকিব হাসানের ভাঙা কণ্ঠে শোনা যায় অসীম কষ্ট—
“আমার ছেলের গন্ধ এখনও আমার গায়ে লেগে আছে। আমি বিশ্বাস করি, একদিন সে আমাকে ফোন করবে—‘বাবা, আমাকে নিয়ে যাও।’”

পরিবারের পক্ষ থেকে মেরিন ড্রাইভ, ইনানী, নাজিরাটেক থেকে শুরু করে হিমছড়ি পর্যন্ত প্রতিটি স্থানে খোঁজ করা হয়েছে। তবুও ফেরার কোনো খবর আসেনি। জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, বিমানবাহিনী ও বিভিন্ন সংস্থা ড্রোন, স্পিডবোট ও ওয়াটারবাইক ব্যবহার করে দীর্ঘ অনুসন্ধান চালিয়েছে, কিন্তু কোনো সাফল্য মেলেনি।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল আলম জানান—
“এখনও অরিত্রের কোনো সন্ধান মেলেনি। জীবিত পাওয়ার সম্ভাবনা কম হলেও অনুসন্ধান চালু থাকবে।”
তবুও পরিবার বিশ্বাস হারায়নি। অরিত্রের বাবা বলেন—
“আমি বিশ্বাস করি, একদিন মিরাকেল ঘটবেই। আমার ছেলে ফিরবে, আর আমরা আবার একসঙ্গে হাঁটব এই সৈকতে।”

কক্সবাজারের মানুষ আজও অরিত্রের জন্য দোয়া করছে। সমুদ্রপাড়ে ভেসে থাকা বাবার হাহাকার আর মায়ের আকুতি প্রতিদিন নতুন করে সবাইকে মনে করিয়ে দিচ্ছে—
৪৩ দিনেও ফিরেনি অরিত্র, কিন্তু তার স্মৃতি এখনও বেঁচে