১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে প্রবাসে নিহত নির্মাণ শ্রমিক বিল্লাল মোল্লার নিথর দেহ ফিরেছে তার রাজবাড়ীর গ্রামের বাড়িতে। মালয়েশিয়ায় ভবন নির্মাণকাজে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো এই তরুণের মরদেহ সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার দিকে রাজবাড়ী সদরের বসন্তপুর ইউনিয়নের হাটজয়পুর গ্রামের নিজ বাড়িতে পৌঁছায়।
মরদেহ আসার পর স্বজন ও প্রতিবেশীদের কান্না-আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে চারপাশের পরিবেশ। শেষবারের মতো তাকে একনজর দেখতে ভিড় করেন এলাকার শত শত মানুষ। নিহত বিল্লাল হাটজয়পুর গ্রামের জব্বার মোল্লার ছেলে ছিলেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, বিল্লালের চার বছর বয়সী মেয়ে ঐশী বাবার জন্য অপেক্ষা করছিল। বাবার মরদেহ বাড়িতে আসার পর তার নিস্তব্ধতা শোকের আবহকে আরও গভীর করে তোলে। সকাল থেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন বিল্লালের স্ত্রী, মা-বাবা ও ভাইবোনেরা।
সকাল ১১টার দিকে বসন্তপুর রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠে বিল্লালের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নেন আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। জানাজা শেষে ঈদগাহের সামনের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এই দুর্ঘটনা ঘটে এক সপ্তাহ আগে, সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে মালয়েশিয়ার জোহর বারু এলাকায়।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, জীবিকার তাগিদে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান বিল্লাল মোল্লা। সেখানে জোহর বারু এলাকায় একটি কনস্ট্রাকশন সাইটে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি।
ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তিনি নিচে দাঁড়িয়ে কংক্রিট বালতিতে খোয়া-সিমেন্ট লোড করে ক্রেনের মাধ্যমে ভবনের ওপর পাঠানোর কাজ করছিলেন। প্রথম বালতি ওপরে পাঠিয়ে তিনি কাজের অবসরে ফোনে মেয়ে ঐশীর সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর ফোন রেখে আবারও বালতি লোড করে ওপরে পাঠান। কিন্তু এবার বালতি ওপরে না গিয়ে দড়ি ছিঁড়ে নিচে পড়ে যায় এবং সরাসরি তার বুকের ওপর আঘাত করে। ঘটনাস্থলেই মারা যান বিল্লাল।
মাত্র কয়েক মিনিট আগেই মেয়ের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি — আর কয়েক মিনিট পরই নিভে যায় তার জীবন প্রদীপ। পরিবারের সদস্যরা বলেন, জীবিকার তাগিদেই তিনি প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছিলেন। মাত্র দুই বছরের মাথায় এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউই।
বিল্লালের বাবা জব্বার মোল্লা জানান, “আমার ছেলেটি মারা গিয়ে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। সে যে মালিকের কাজ করতো, সেই মালিক সামান্য কিছু টাকা পাঠিয়েছে। এখন এই পরিবারটা কিভাবে চালাবো বুঝতে পারছি না।”
এলাকাবাসীরা জানান, বিল্লাল ছিলেন পরিশ্রমী, শান্ত-স্বভাবের এবং সবার প্রিয় একজন যুবক। তার আকস্মিক মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও স্পষ্ট হয়েছে, প্রবাসে কর্মরত শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কতটা জরুরি। অনেক সময় পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় তারা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে কাজ করতে বাধ্য হন, যা প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, প্রবাসে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও বীমা সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন।