ভাবীর কাছে মাদকের টাকা না পেয়ে তিন বছরের শিশিকে হত্যা করলো চাচা

শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

shishu hottakando ramu coxs bazar

কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলায় এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে মাদকের টাকার জন্য তিন বছরের ভাতিজিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তারই আপন চাচা নুরুল হাকিম। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের খুইল্ল্যা শিয়া মোহাম্মদ শরীফ পাড়ায় এই নির্মম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।

নিহত শিশুটির নাম ফাতেমা বেগম (৩)। সে ঈদগড় ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নুরুল আজিম ও তার স্ত্রীর একমাত্র কন্যা। ঘটনার পর পুলিশ অভিযুক্ত চাচা নুরুল হাকিমকে আটক করেছে।

ঈদগড় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) খোরশেদ আলম জানান, নুরুল হাকিম দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত ছিলেন। নিয়মিত তিনি ভাই ও ভাবির কাছে মাদক কেনার টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করতেন। বুধবার রাতেও তিনি ভাবির কাছে টাকা দাবি করেন, কিন্তু ভাবি অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি প্রথমে ভাবির ওপর দা নিয়ে হামলার চেষ্টা চালান। ভাবি কোনোমতে পালিয়ে গেলে ক্ষুব্ধ চাচা ঘরে থাকা ছোট্ট ফাতেমার মাথায় দা দিয়ে কোপ দেন।

ঘটনাস্থলেই শিশুটি গুরুতর আহত হয়ে পড়ে। প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে দ্রুত রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে এবং অভিযুক্ত চাচা নুরুল হাকিমকে আটক করে। বর্তমানে তিনি রামু থানা হেফাজতে রয়েছেন।

Ad Page

শেখ ফরিদ, রামু থানার পরিদর্শক (তদন্ত), বলেন — “নিহত শিশুটির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল-এ প্রেরণ করা হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। পরিবার এখনো শোকে পাথর হয়ে আছে।”

এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তারা দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নুরুল হাকিম একজন কুখ্যাত মাদকাসক্ত হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। একাধিকবার পরিবার তাকে চিকিৎসার জন্য বোঝানোর চেষ্টা করলেও তিনি তাতে সাড়া দেননি। বরং নিয়মিত ভাইয়ের সংসারে গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতেন।

শিশু ফাতেমার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মাত্র তিন বছর বয়সে নিষ্পাপ প্রাণটি যে নৃশংসভাবে প্রাণ হারালো, তা মেনে নিতে পারছেন না কেউ।

এই ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিল, মাদকাসক্তি শুধু ব্যক্তির জীবন নয়, পুরো পরিবারকে ধ্বংস করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবারে কেউ মাদকাসক্ত হলে তাকে চিকিৎসা, কাউন্সেলিং এবং আইনি সহায়তার মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব সঠিক পথে ফেরানোর চেষ্টা করা উচিত।

বাংলাদেশে মাদকাসক্তির হার দিনদিন বাড়ছে, যা পারিবারিক সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড ও অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *