সিলেটে পাথর লুট: আ.লীগ-বিএনপি-জামায়াতের যৌথ সিন্ডিকেটের ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ

📅 মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫

sylhet stone loot 2025
ছবি সংগৃহীত

সিলেটে পাথর লুট: আ.লীগ-বিএনপি-জামায়াতের সিন্ডিকেটে ধ্বংস ‘শাহ আরেফিন টিলা’

সিলেটের শাহ আরেফিন টিলা—১৩৭ একর জায়গা জুড়ে থাকা এই পাহাড় এখন আর টিলা নেই, বরং রূপ নিয়েছে ধ্বংসস্তূপে। একসময়কার প্রায় ৫০ ফুট উঁচু পাহাড়টি আজ গর্ত আর ফাঁকা জায়গায় ভরপুর। মাত্র এক বছরে শতকোটি টাকার পাথর লুট হয়ে গেছে এখান থেকে।

১৯৯৫ সালে আইন হলেও ১৯৯৯ সালে সরকারিভাবে ইজারা দেয়া হয় এই টিলা। পরবর্তীতে মামলা-মোকদ্দমার কারণে বন্ধ থাকলেও ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে ফের শুরু হয় নির্বিচারে পাথর উত্তোলন। গত এক বছরে এই টিলায় আর কোনও চিহ্ন অবশিষ্ট নেই।

একসময়কার ৭০০ বছরের ঐতিহাসিক শাহ আরেফিন টিলা মাজারও এখন নিশ্চিহ্ন। মাত্র চার মাসের মধ্যে পুরো টিলা গিলে খেয়েছে পাথর লুটের ভয়াবহ সিন্ডিকেট।

সিন্ডিকেটের হোতারা কারা?

যমুনা টেলিভিশনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে অন্তত ২০ জন প্রভাবশালী নেতার নাম। বিএনপি, আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতের স্থানীয় নেতাকর্মীরা মিলেই এই অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছেন।

  • উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বাবুল আহমদ বাবুল
  • ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেবুল আহমদ
  • ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ইসমাঈল মিয়া
  • উপজেলা আ.লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক হুঁশিয়ার আলী
  • ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি ফয়জুর রহমান
  • জামায়াত কর্মী ইয়াকুব আলী
  • সাবেক খাদেমের ছেলে মনির হোসেনসহ আরও অনেকে

ইয়াকুব আলীর দাবি, তিনি পাথর উত্তোলন করেননি, বরং গাড়ি থেকে কিনে মিলগুলোতে সরবরাহ করেছেন। তবে আওয়ামী লীগের যেসব নেতারা সরাসরি জড়িত ছিলেন তারা এখন পলাতক।

প্রশাসন কি করছিল?

অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ সদস্যরাও পাথরবাহী ট্রাক-ট্রাক্টর থেকে চাঁদাবাজিতে যুক্ত ছিলেন। যমুনা টেলিভিশনের কাছে এমনকি ভিডিও প্রমাণও এসেছে।

ধলাই নদীর পূর্ব ও পশ্চিমে শত শত জায়গা ভাড়া নিয়ে গড়ে ওঠে পাথর রাখার স্তুপ। প্রতিটি জায়গার ভাড়া দৈনিক দুই হাজার টাকা। শ্রমিকরা নদী থেকে পাথর উত্তোলন করে বিক্রি করলেও আসল লাভ যেত সিন্ডিকেট নেতাদের পকেটে।

আরও নাম প্রকাশ

অনুসন্ধানে আরও ৫১ জনের নাম উঠে এসেছে যারা পাথর ব্যবসায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন—
জেলা যুবদল সদস্য মোস্তাকিম আহমেদ ফরহাদ, পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি আলিমুদ্দিন, উপজেলা বিএনপির সদস্য হাজী কামাল, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান লাল মিয়া ও তার ছেলে রিয়াজ উদ্দিনসহ অনেকেই।

পরিবেশ আন্দোলন ব্যর্থ

পরিবেশবাদীরা বছরের পর বছর এ লুটপাট ঠেকানোর চেষ্টা করলেও সফল হয়নি। বেলা’র সমন্বয়ক শাহ সাহেদা আক্তারের মতে, “চেহারা পাল্টেছে, কিন্তু অবৈধ কাজ থামেনি।”

এমনকি জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উপস্থিত থাকা অবস্থাতেই পাথর উত্তোলনের ঘটনা ক্যামেরায় ধরা পড়ে। অথচ এখন তাকেই দেয়া হয়েছে তদন্তের দায়িত্ব।

ভয়াবহ পরিসংখ্যান

গত এক বছরে সাদাপাথর, জাফলং, শাহ আরেফিন টিলা ও রাংপানি থেকে প্রায় ৩ কোটি ঘনফুট পাথর লুট হয়েছে। উদ্ধার করা গেছে মাত্র ৫ লাখ ঘনফুট। বাকি সব বিক্রি হয়ে গেছে অথবা ক্রাশার মিলে গুঁড়িয়ে ফেলা হয়েছে।

সংবাদ সোর্সঃ যমুনা টেলিভিশন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *