ওমান থেকে স্বপ্নের বাড়ি ফিরেছিলেন বাহার উদ্দিন। কিন্তু সেই স্বপ্নমাখা ফেরা মুহূর্তেই যেন কালো অধ্যায়ে পরিণত হলো তার জীবনে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরার পথে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি হারালেন তার মা, স্ত্রী, মেয়ে, নানীসহ একই পরিবারের সাতজনকে।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ পূর্ব বাজারে বুধবার (৬ আগস্ট) ভোরে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। প্রবাসীর স্বপ্নের ফেরা মুহূর্তে নিথর হয়ে গেল প্রিয়জনেরা। পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া, আহাজারিতে ভরে উঠেছে গ্রাম।

কীভাবে ঘটল দুর্ঘটনা?
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম চৌপল্লী গ্রামের ওমান প্রবাসী বাহার উদ্দিন প্রায় আড়াই বছর পর দেশে ফেরেন। বিমানবন্দর থেকে পরিবারের সদস্যরা মাইক্রোবাস নিয়ে তাকে আনতে যান। ফেরার পথে ভোরে চন্দ্রগঞ্জ পূর্ব বাজার এলাকায় পৌঁছালে চালক মাইক্রোবাসের নিয়ন্ত্রণ হারান। মুহূর্তেই গাড়িটি পাশের রহমতখালী খালে পড়ে যায়।
সেসময় গাড়ির দরজা লক থাকায় দ্রুত বের হতে পারেননি সবাই। প্রবল স্রোতের মধ্যে মাত্র ছয়জন জানালা ভেঙে বেরিয়ে বেঁচে যান। আর বাকি সাতজন প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পানির নিচে আটকে থেকে প্রাণ হারান।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন—
- প্রবাসী বাহারের মা মুরশিদা (৫০)
- স্ত্রী কবিতা (২৩)
- মেয়ে মীম (২)
- নানী ফয়জুন নেছা (৭০)
- ভাইয়ের স্ত্রী লাবনী (২৫)
- ভাতিজি লামিয়া (৮)
- ভাতিজি রেশমী (৯)
জীবিতদের মধ্যে রয়েছেন বাহার উদ্দিন নিজে, তার বাবা আবদুর রহিম, শ্বশুর ইসকান্দর মির্জা, শ্যালক রিয়াজ, ভাইয়ের স্ত্রী সুইটি এবং গাড়িচালক রাজু।
বুধবার সকালে নিহতদের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, একে একে সাতজনের মরদেহ আসতেই ভেঙে পড়েন স্বজনরা। আহাজারিতে মুখর পুরো গ্রাম। ওমান থেকে ফেরার আনন্দ মুহূর্তেই পরিণত হয়েছে নিদারুণ শোকে। বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন নিহতদের নিকটাত্মীয়রা।
প্রবাসী বাহারের বাবা আবদুর রহিম বলেন, “ছেলেকে আনতে গিয়ে এমন বিপদ হবে ভাবিনি। একসাথে এতজনকে হারালাম। জীবিত থেকে যেন আরও বড় কষ্টে আছি।”
চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মোবারক হোসেন ভূঁইয়া বলেন, চালকের চোখে ঘুম থাকার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার পর চালক পালিয়ে যায়। মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়েছে এবং আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হবে বলে জানান তিনি।
যে প্রবাসী দীর্ঘ আড়াই বছর পর দেশে ফিরেছিলেন পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার আনন্দে, সেই ফেরা মুহূর্তেই সাত প্রিয়জনের লাশ বুকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন তিনি। স্বপ্নের বাড়ি ফেরাটা হয়ে গেল শোকের যাত্রা।